যুক্তরাষ্ট্রের এক ডাক্তারের প্রতারণা, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে উন্মোচন: হতবাক পরিবারগুলো
যুক্তরাষ্ট্রে এক ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে উন্মোচিত হয়েছে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। এক ডাক্তারের গোপন কীর্তি, যা কয়েক দশক ধরে লুকিয়ে ছিল। এই ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সামার ম্যাককেসন।
দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। চিকিৎসকেরা এর কারণ হিসেবে বারবার তাঁর রক্তের জমাট বাঁধার সমস্যাকে চিহ্নিত করছিলেন, কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
চিকিৎসার জন্য তিনি যখন মায়ো ক্লিনিকে যান, তখনও চিকিৎসকেরা তাঁর এই জটিলতা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন। অবশেষে, ২০১৯ সালে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁর পরিবারের গোপন রহস্য উন্মোচিত হয়। এই পরীক্ষার ফলাফলে জানা যায়, তাঁর আরও সাতজন সহোদর ভাইবোন রয়েছে।
বিষয়টি জানার পর তিনি হতবাক হয়ে যান।
পরে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, তাঁর জন্মরহস্যের আসল কাহিনী। জানা যায়, তাঁর মা কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির সাহায্য নিয়েছিলেন এবং সে সময় ডা. চার্লস পিট নামের এক চিকিৎসক রোগীর অজান্তে নিজের শুক্রাণু ব্যবহার করে গর্ভধারণ করান। ডা. পিট ছিলেন একজন ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ।
এই ঘটনার শিকার হয়েছিলেন আরও অনেকে।
১৯৮০ ও ১৯৯০ এর দশকে, কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি (Artificial Reproductive Technology) নিয়ে গবেষণা চলছিল। ওই সময়ে, রোগীদের ইনট্রা-ইউটেরাইন ইনসেমিনেশন (IUI) পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তান ধারণে সহায়তা করা হতো।
এই পদ্ধতিতে, একজন ডাক্তারের মাধ্যমে রোগীর জরায়ুতে শুক্রাণু প্রবেশ করানো হতো। রোগীদের জানানো হতো, এই শুক্রাণু একজন দাতার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু ডা. পিট রোগীদের না জানিয়ে নিজের শুক্রাণু ব্যবহার করতেন।
এই প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন লরি ক্রু্াপ্পা ও তাঁর পরিবার। তাঁরাও জানতে পারেন, তাঁদের সন্তানদের আসল পিতা ডা. পিট।
বিষয়টি জানার পর তাঁরা হতবাক হয়ে যান। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের পরিবারের অন্য সদস্যদের সম্পর্কে জানতে পারেন।
ডা. পিট ২০১৩ সালে মারা যান। তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ডা. পিটকে একজন “দয়ালু চিকিৎসক” হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
তিনি হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল থেকে পাশ করেছিলেন এবং ডিউক ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করতেন।
চিকিৎসকদের এই ধরনের প্রতারণা চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘ফার্টিলিটি ফ্রড’ নামে পরিচিত। রোগীদের সম্মতি ছাড়া তাঁদের শরীরে অন্য কারো শুক্রাণু ব্যবহার করা অনৈতিক এবং গুরুতর অপরাধ।
এই ধরনের কাজ আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মূলনীতির পরিপন্থী।
যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তিরা এখন বিচারের জন্য আইনি লড়াইয়ের কথা ভাবছেন। তবে, ডা. পিটের মৃত্যুর কারণে তাঁদের পক্ষে ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন।
এই ঘটনার শিকার হওয়া ব্যক্তিরা তাঁদের পরিবারের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য জানতে চান। কারণ, তাঁদের আশঙ্কা, এই ঘটনার ফলে তাঁদের মধ্যে বংশগত রোগ দেখা দিতে পারে।
এই ঘটনা চিকিৎসা বিজ্ঞানের নৈতিকতা এবং রোগীদের অধিকারের প্রতি নতুন করে গুরুত্ব আরোপ করেছে। চিকিৎসকদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত এবং রোগীদের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখা অপরিহার্য।
তথ্য সূত্র: সিএনএন