মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি (DNC)-এর প্রধান কেন মার্টিন আগামী ২০২৮ সালের নির্বাচনে কর্পোরেট এবং ‘ডার্ক মানি’ বা গোপন তহবিল ব্যবহারের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন।
দলটির অভ্যন্তরে এই বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিতর্কের মধ্যেই প্রগতিশীলদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে মার্টিন এই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন। আসলে, ডেমোক্রেটিক পার্টির অভ্যন্তরে দীর্ঘদিন ধরেই সুপার প্যাক (Super PAC) নামে পরিচিত শক্তিশালী কিছু স্বাধীন রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নির্বাচনী প্রচারণায় অর্থ খরচ করার বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে।
এই সুপার প্যাকগুলো নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, যেমন বার্নি স্যান্ডার্স, দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের তহবিলের ব্যবহার বন্ধের জন্য DNC-এর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি ক্রিপ্টোকারেন্সি গ্রুপ এবং ইসরায়েলপন্থী লবিস্ট সংস্থা AIPAC-এর অর্থ খরচ করার প্রবণতা বাড়ায় এই দাবি আরও জোরালো হয়েছে।
কেন মার্টিন প্রস্তাবিত একটি নতুন প্রস্তাবনায় (resolution) এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছেন। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, একটি নতুন সংস্কার প্যানেল গঠন করা হবে, যারা ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় কর্পোরেট এবং গোপন তহবিলের ব্যবহার কীভাবে কমানো যায়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।
যদিও প্রস্তাবনায় সরাসরি সুপার প্যাকের কথা উল্লেখ করা হয়নি, তবে এটি সম্ভবত দলীয় প্রাইমারিগুলিতে সুপার প্যাকগুলির অর্থ ব্যয়ের উপরও বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। এই প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হিসেবে কংগ্রেসের মাধ্যমে আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
এর জন্য সুপ্রিম কোর্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়, ‘সিটিজেনস ইউনাইটেড’-এর (Citizens United) সংশোধন করা দরকার। ২০১০ সালের এই রায়ের ফলে মার্কিন নির্বাচনে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়। বার্নি স্যান্ডার্সসহ ডেমোক্রেটিক পার্টির সাতজন সিনেটর (সংসদ সদস্য) গত জুনে কেন মার্টিন এবং সিনেটের সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমারের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন।
চিঠিতে তাঁরা সুপার প্যাকগুলোর মাধ্যমে অর্থ ব্যয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য একটি প্রক্রিয়া শুরুর আহ্বান জানান। তবে, দলের কিছু সমালোচক মনে করেন, সুপার প্যাকের ব্যবহার সীমিত করলে ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকানদের (যুক্তরাষ্ট্রের অপর প্রধান রাজনৈতিক দল) থেকে পিছিয়ে পড়তে পারে।
তাঁদের মতে, এমন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা কঠিন হবে। কারণ, ডেমোক্রেটিক প্রার্থীরা সুপার প্যাকগুলির সঙ্গে সরাসরি সমন্বয় করতে না পারলেও, এই সংগঠনগুলো বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিসের প্রচারণায় এদের ভূমিকা ছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে তহবিল সংগ্রহের প্ল্যাটফর্ম ‘অ্যাক্টব্লু’ (ActBlue) ডেমোক্র্যাটদের জন্য প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছিল। এই প্রেক্ষাপটে, ডেমোক্রেটিক পার্টির সাবেক চেয়ার জেইমি হ্যারিসন স্যান্ডার্সের পদক্ষেপকে ‘লোক দেখানো’ হিসেবে বর্ণনা করে কংগ্রেসকে আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
কেন মার্টিনের প্রস্তাবনাটি যদি পাস হয়, তাহলে নতুন প্যানেল এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে কাজ করবে এবং সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলো চিহ্নিত করবে। এই প্যানেল কংগ্রেসের কাছে উপস্থাপনের জন্য একটি তালিকাও তৈরি করবে। আগামী গ্রীষ্মে মিনিয়াপলিসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া DNC-এর বৈঠকে (আগস্ট মাসের ২৫ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত) সদস্যরা এই প্রস্তাবনার ওপর ভোট দেবেন।
তথ্য সূত্র: CNN