ঘরের স্মৃতিগুলো: শিল্পী ড. হো সু-এর অসাধারণ সৃষ্টি!

শিরোনাম: শিল্পী ডোহো সু: স্মৃতি আর বাস্তবের বুননে ঘর

ছেলেবেলার স্মৃতিগুলো যেন শিল্পীর মনে গেঁথে থাকে গভীর ভাবে। দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্পী ডোহো সু’র কাজ দেখলে তেমনটাই মনে হয়।

ঘর, স্মৃতি আর উদ্বাস্তু জীবনের এক অসাধারণ চিত্র ফুটিয়ে তোলেন তিনি তাঁর শিল্পকর্মে। ঘর মানে শুধু একটা চার দেওয়ালের কাঠামো নয়, বরং এটি একটি মানসিক জগৎ, যেখানে মিশে থাকে মানুষের আবেগ, অনুভূতি আর ফেলে আসা সময়ের গল্প।

১৯৭০-এর দশকে সিউলে, ডোহো সু’র বাবা তাঁদের পরিবারের জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী কোরীয় ‘হানোক’ ঘর তৈরি করেন। কাঠের তৈরি বাঁকানো ছাদওয়ালা এই ঘরটি ছিল কোরীয় সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

ডোহো সু’র বাবার মতে, এটি ছিল দ্রুত পশ্চিমা সংস্কৃতির দিকে ধাবিত হওয়া একটি দেশে ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির শিকড় ধরে রাখার এক দারুণ উপায়। বাবার এই ঐতিহ্যপ্রেম, সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা ছেলেবেলায় গভীরভাবে প্রভাবিত করে ডোহো সু’কে।

ছোটবেলার সেই ‘হানোক’ বাড়ির স্মৃতি আজও শিল্পীমনের গভীরে গেঁথে আছে। পরবর্তীকালে, ১৯৯১ সালে তিনি যখন নিউইয়র্কে পাড়ি জমান, তখন থেকেই যেন ‘ঘর’ ধারণাটি তাঁর শিল্পকর্মের প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে।

শিল্পী তাঁর স্মৃতি আর অভিজ্ঞতার জগৎকে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন, যা দর্শককে নাড়া দেয়।

ডোহো সু’র শিল্পকর্মগুলোতে সাধারণত স্বচ্ছ কাপড়ের তৈরি স্থাপত্য কাঠামো দেখা যায়। এই কাঠামো গুলো তৈরি করতে তিনি ব্যবহার করেন বিশেষ ধরণের নাইলন জাল।

তাঁর মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকা সেলাইকর্মীরা এই কাজগুলো করেন, যাঁর ফলে প্রতিটি ডিটেইল-এ সূক্ষ্মতা থাকে। দরজার হাতল থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ড কিংবা স্ক্রু-এর সামান্য দাগ— সবকিছুই যেন বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।

এই স্বচ্ছ কাঠামো গুলো এক ধরনের মায়াবী জগৎ তৈরি করে, যা একাধারে দুর্বল, আবার শক্তিশালী। এই কাজগুলো আমাদের আপন করে তোলে, যেখানে মিশে আছে মানুষের পরিচয়, স্থানান্তরের বেদনা আর স্মৃতির গভীরতা।

ডোহো সু’র কাজ শুধু একটি স্থান বা স্থাপত্যের প্রতিরূপ নয়, বরং এটি একটি যাত্রাপথের মতো। এই পথ আমাদের নিয়ে যায় অতীতের স্মৃতিতে, ফেলে আসা প্রিয় ঠিকানায়।

শিল্পী তাঁর কাজে দেখিয়েছেন, কীভাবে একটি স্থান মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।

বর্তমানে, ডোহো সু’র কাজ নিয়ে একটি প্রদর্শনী চলছে লন্ডনের ‘Tate Modern’-এ। “Walk the House” শিরোনামের এই প্রদর্শনীতে শিল্পীর নতুন এবং পুরনো কাজগুলো দেখা যাচ্ছে।

এই প্রদর্শনী যেন শিল্পীর জীবনের প্রতিচ্ছবি, যেখানে তিনি তাঁর শৈশব, দেশান্তর এবং স্মৃতির জগৎকে একত্রিত করেছেন।

ডোহো সু’র কাজ আমাদের দেখায়, কীভাবে ঘর শুধু একটি আশ্রয়স্থল নয়, বরং এটি আমাদের পরিচয়, সংস্কৃতি এবং স্মৃতির ধারক।

শিল্পী তাঁর কাজে প্রমাণ করেছেন, স্থান-কাল পেরিয়েও কীভাবে মানুষের স্মৃতিগুলো বেঁচে থাকে, যা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *