ডাক্তারকে ফেরত পাঠানো নিয়ে তোলপাড়, কেন রাশিয়াকে তাড়ানো হলো?

রোহাইনেডের একজন চিকিৎসক ও অধ্যাপিকা, র‍্যাশ আল-আলাউয়েহকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে লেবাননে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ভিসা থাকা সত্ত্বেও এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তাকে ফেরত পাঠানো হয়। এই ঘটনায় অভিবাসন বিষয়ক আইনজীবী ও ব্রাউন মেডিসিনের সহকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তাদের মতে, এর ফলে রোগীদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হবে। র‍্যাশ আল-আলাউয়েহ ২০১৪ সালে বৈরুতের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে মেডিসিন ডিগ্রি অর্জন করেন।

এরপর তিনি ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটি, ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ও ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। তিনি “এক্সচেঞ্জ ভিজিটর” হিসেবে জে-১ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির একজন মুখপাত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন, জুন ২০২৪ থেকে আলাউয়েহ ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ব্রাউন মেডিসিনের কিডনি রোগের চিকিৎসা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ শুরু করেন।

তিনি এইচ-১বি ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন, যা দ্রুত অনুমোদন করা হয়। আলাউয়েহর ভিসা নিয়ে জটিলতা শুরু হয় ফেব্রুয়ারিতে, যখন তিনি লেবানন ভ্রমণে যান।

এরপর যুক্তরাষ্ট্র ফিরতে তার ভিসার অনুমোদন পেতে দেরি হয়। তার আইনজীবীরা জানান, নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে লেবাননের নাগরিকদের ভিসা যাচাইয়ে কড়াকড়ি আরোপের কারণে এই বিলম্ব হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি) জানায়, আলাউয়েহ লেবাননে থাকাকালীন হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহর জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন। হিজবুল্লাহ একটি লেবানন ভিত্তিক সংগঠন, যা ইরানের সমর্থনপুষ্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো একে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।

সিবিপি আরও জানায়, আলাউয়েহ সিবিপি কর্মকর্তাদের কাছে নাসরুল্লাহর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। হোয়াইট হাউস এক সামাজিক মাধ্যমে আলাউয়েহর একটি ছবি প্রকাশ করে, যার সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ছবি জুড়ে দিয়ে ক্যাপশন দেয়, “বাই বাই র‍্যাশা”।

আলাউয়েহ বোস্টন লোগান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর সময় তার ফোনে নাসরুল্লাহ ও ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ছবি পাওয়া যায়। ট্রাম্প প্রশাসন আদালতে জানায়, আলাউয়েহ বিমানবন্দরে আসার ১-২ দিন আগে ছবিগুলো মুছে ফেলেছিলেন।

তিনি কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে হিজবুল্লাহ ও আয়াতুল্লাহর প্রতি রাজনৈতিক বা সামরিক সমর্থন রয়েছে এমন ধারণা দিতে চাননি। সিবিপি জানিয়েছে, ভিসা পাওয়া মানেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিশ্চয়তা নয়।

সীমান্ত কর্মকর্তারা নিরাপত্তা পরীক্ষার পর প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। তারা আরও বলেন, যারা চরমপন্থী আদর্শ প্রচার করে বা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।

আলাউয়েহকে আটকের পর তার আইনজীবী আদালতের দ্বারস্থ হন এবং অভিযোগ করেন যে, তাকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আদালত আলাউয়েহকে মাসাচুসেটস থেকে সরিয়ে নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

কিন্তু এরপরেও তাকে লেবাননে ফেরত পাঠানো হয়। আদালত এর কারণ জানতে চাইলে সিবিপি জানায়, আদালতের নির্দেশ তাদের কাছে পৌঁছানোর আগেই আলাউয়েহকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

আলাউয়েহর আইনজীবী জানিয়েছেন, তারা তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনার জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন, যাতে তিনি তার রোগীদের সেবা করতে পারেন। ব্রাউন মেডিসিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আলাউয়েহ ছিলেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন চিকিৎসক।

তার অনুপস্থিতি কিডনি রোগীদের জন্য বড় ক্ষতি। ডাক্তার ডগলাস শেমিন জানান, আলাউয়েহ ছিলেন একজন সেরা প্রার্থী। তার অনুপস্থিতি রাজ্যের কিডনি রোগ ও প্রতিস্থাপনের রোগীদের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি।

ব্রাউন মেডিসিনের কিডনি রোগ ও উচ্চ রক্তচাপ বিভাগের অন্তর্বর্তীকালীন পরিচালক ড. সুসি হু বলেন, আলাউয়েহ প্রতিদিন রোগীদের চিকিৎসা করতেন। কিডনি প্রতিস্থাপন রোগীদের আজীবন ফলোআপ প্রয়োজন এবং তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ব্রাউনের ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রোগ্রামের পরিচালক ড. পল মরিসি বলেন, আলাউয়েহ একজন অসাধারণ চিকিৎসক এবং তাদের জন্য কাজ করাটা ছিল আনন্দের। তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *