একটি ভালোবাসার গল্প: প্রিয় সারমেয়কে হারানোর পর ৫০,০০০ ডলার খরচ করে ক্লোন করালেন মার্কিন নারী। পোষা প্রাণীর প্রতি মানুষের ভালোবাসা কত গভীর হতে পারে, তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন নারী।
প্রিয় সারমেয় (কুকুর) ‘লুকাস’-কে হারানোর পর শোক ভুলতে ৫০,০০০ ডলার খরচ করে তাকে আবার ফিরিয়ে এনেছেন তিনি। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও, ভালোবাসার এমন গভীরতা সত্যিই বিরল।
২০১৭ সালের মার্চ মাসে মায়ামিতে বসবাসকারী ওই নারী তার স্বামী জাস্টিনের সঙ্গে একটি সুন্দর ‘বস্টন টেরিয়ার’ কুকুরছানা, লুকাসকে গ্রহণ করেন। কুকুরটি তাদের পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে।
লুকাস শুধু একটি পোষা প্রাণী ছিল না, বরং তাদের আত্মার বন্ধু হয়ে উঠেছিল। লুকাসের বুদ্ধিমত্তা, আনুগত্য এবং ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন ওই নারী। তারা একসঙ্গে ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন।
কিন্তু লুকাসের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। সাত বছর বয়সে ধরা পরে ‘লিম্ফোমা’ (এক ধরনের ক্যান্সার)। প্রিয় বন্ধুকে বাঁচাতে অস্থির হয়ে ওঠেন ওই নারী।
চিকিৎসার জন্য ‘বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট’-এর কথা ভাবা হয়, কিন্তু সেক্ষেত্রে উপযুক্ত ডোনারের প্রয়োজন ছিল। প্রথমে লুকাসের ভাইদের থেকে চেষ্টা করা হয়, কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি।
এরপর তাদের মাথায় আসে ক্লোনিংয়ের ধারণা। শুরুতে, তারা লুকাসের চিকিৎসার জন্য একটি ক্লোন তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যা ডোনার হিসেবে কাজ করতে পারতো।
কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। লুকাস তার রোগ ধরা পড়ার ২৭ দিনের মাথায় মারা যায়। প্রিয় বন্ধুকে হারানোর গভীর শোক গ্রাস করে ওই নারীকে।
সেই শোক থেকে মুক্তি পেতে তিনি ক্লোনিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ক্লোনিংয়ের জন্য প্রায় ৫০,০০০ ডলার খরচ হয়।
ওই নারীর নিজের একটি সফল ব্যবসা ছিল, তাই তার পক্ষে এই বিশাল পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা কঠিন ছিল না। তিনি বলেন, যদি এর জন্য এক মিলিয়ন ডলারও খরচ করতে হতো, তবুও তিনি রাজি ছিলেন।
ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে, লুকাসের একটি ‘জিনগতভাবে অভিন্ন’ (genetically identical) কুকুরছানা তৈরি করা হয়। একটি ক্লিনিকে লুকাসের কোষের নমুনা নিয়ে, সেই কোষ থেকে নতুন কোষ তৈরি করা হয়।
এরপর একটি স্ত্রী কুকুরের ডিম্বাণুর মধ্যে সেই কোষ স্থাপন করে ভ্রূণ তৈরি করা হয়। পরে, অন্য একটি কুকুর সেই ভ্রূণ বহন করে এবং এর মাধ্যমে জন্ম হয় লুকাসের ক্লোন করা কুকুরছানার।
ক্লোনিংয়ের পুরো বিষয়টি নিয়ে পরিবারের অনেকে দ্বিধাগ্রস্থ ছিলেন। এমনকি, তার এক বন্ধু এই পদক্ষেপকে ‘ঈশ্বর-খেলা’ হিসেবেও অভিহিত করেন। বিষয়টি নিয়ে অনেকের মনে নৈতিক প্রশ্ন থাকলেও, ওই নারী তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।
অবশেষে, লুকাসের মৃত্যুর পাঁচ মাস পর, ওই ক্লিনিক থেকে জানানো হয় যে দুটি কুকুরছানা জন্ম নিয়েছে। যখন তিনি তাদের প্রথম দেখেন, তখন লুকাসের মতোই তাদের অবয়ব, আচরণ দেখে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
তিনি তাদের নাম রাখেন লুকাস প্রিন্স এবং লুকাস গ্যাব্রিয়েল। ওই নারীর ভাষায়, ক্লোনিং তার হৃদয়ের ক্ষত সারিয়ে তুলেছে।
যদিও সবাই ক্লোনিংয়ের সঙ্গে একমত নাও হতে পারে, তবে এটি তার কাছে এক অলৌকিক ঘটনার চেয়ে কম কিছু নয়। ভালোবাসার গভীরতা আর প্রিয়জনের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার এমন দৃষ্টান্ত সত্যিই বিরল।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান