পোষা কুকুর, মানুষের সবচেয়ে পছন্দের বন্ধু হিসেবে পরিচিত, পরিবেশের উপর এক বিরাট প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি, একটি নতুন গবেষণায় এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার একটি সমীক্ষায় জানা গেছে, কুকুর পরিবেশের উপর ব্যাপক এবং বহুবিধ প্রভাব ফেলে, যা সাধারণত আমরা উপলব্ধি করি তার চেয়ে অনেক বেশি উদ্বেগের কারণ।
গবেষণাটি *প্যাসিফিক কনজারভেশন বায়োলজি* জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিল বেটম্যানের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণায় কুকুরের আচরণ এবং পরিবেশের উপর এর প্রভাবগুলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। গবেষকরা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে কুকুরের কারণে বন্যপ্রাণীর জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়, জল দূষিত হয় এবং কার্বন নিঃসরণ বাড়ে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কুকুর বন্যপ্রাণীর জন্য সরাসরি হুমকি স্বরূপ। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ায়, অনিয়ন্ত্রিত কুকুরের আক্রমণে তাসমানিয়ার ছোট পেঙ্গুইনদের (little penguins) কলোনি বিলুপ্তির পথে।
এছাড়াও, কুকুরের মলমূত্র এবং তাদের শরীরে ব্যবহৃত কীটনাশকগুলি জল দূষণের অন্যতম কারণ। এই কীটনাশকগুলি জলজ প্রাণীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
শুধু তাই নয়, পোষা প্রাণীর খাদ্য শিল্পেরও একটি বড় কার্বন পদচিহ্ন রয়েছে।
একটি ২০২০ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, শুকনো পোষা খাবারের উৎপাদন যুক্তরাজ্যের প্রায় দ্বিগুণ জমির সমান পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলে। এই খাদ্য শিল্পের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ একটি উদ্বেগজনক চিত্র। এটি বিশ্বের ৬০তম সর্বোচ্চ কার্বন নিঃসরণকারী দেশের সমতুল্য।
অধ্যাপক বেটম্যান বলেছেন, এই গবেষণাটি বিশেষভাবে সমালোচনামূলক উদ্দেশ্যে করা হয়নি।
বরং এর মূল উদ্দেশ্য হল, মানুষের সবচেয়ে কাছের বন্ধুটির পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। তিনি আরও উল্লেখ করেন, অনেক ক্ষেত্রে কুকুর মানুষের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। তবে, বন্য পরিবেশে কুকুরের কিছু নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে, যা বিবেচনা করা দরকার।
গবেষকরা পরিবেশের উপর কুকুরের প্রভাব কমাতে কিছু সহজ উপায় বাতলেছেন।
- এর মধ্যে অন্যতম হল, জনবহুল স্থানগুলিতে কুকুরের অবাধ বিচরণের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা।
- এছাড়া পাখির বাসা বাঁধার স্থান থেকে তাদের দূরে রাখা এবং পরিবেশবান্ধব উপায়ে কুকুরের বর্জ্য অপসারণ করা অপরিহার্য।
- অধ্যাপক বেটম্যানের মতে, কুকুরের খাদ্য নির্বাচনেও সচেতন হতে হবে।
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদান আছে এমন সস্তা খাবার পরিহার করে, টেকসই উপাদানে তৈরি খাবার বেছে নেওয়া যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কুকুরের মালিকদের সচেতনতা এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের আচরণ পরিবেশের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, সকলের উচিত পোষা কুকুরের মাধ্যমে পরিবেশের উপর যে প্রভাব পড়ছে, সে সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং তা কমাতে সচেষ্ট হওয়া।
তথ্য সূত্র: The Guardian