আগুনে সব হারানো ক্যাপ্টেনের কুকুরের তিমি-প্রেম!

ম্যাক্সি নামের একটি সোনালী রঙের কুকুর, যা হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মাউই-এর লাহাইনার উপকূলের কাছে একটি বিশাল হাম্পব্যাক তিমিকে দেখে আনন্দে চিৎকার করে ওঠে। এই ঘটনাটি ঘটেছে এমন এক নারীর সঙ্গে, যিনি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তাঁর সব হারিয়েছিলেন।

এই অগ্নিকাণ্ডে তাঁর তিনটি নৌকাও পুড়ে গিয়েছিল। তাঁর নাম ক্রিসি লভিট। তিনি এখন তিমি দেখা বিষয়ক পর্যটন ব্যবসা পুনরায় শুরু করেছেন।

**কুকুর ও তিমির সাক্ষাৎ**

শনিবার, লভিট এবং তাঁর ১১ বছর বয়সী পোষ্য ম্যাক্সি একটি মাছ ধরার নৌকায় ছিলেন। তাঁরা লাহাইনা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে ছিলেন, যখন একটি হাম্পব্যাক তিমি তাঁদের কাছাকাছি আসে।

লভিট জানান, ম্যাক্সি এর আগে বহুবার তিমিদের দেখে চিৎকার করেছে, কিন্তু কোনো তিমি তার ডাকে সাড়া দেয়নি। কিন্তু এবার, যেন ম্যাক্সির ডাকে সাড়া দিয়েই, বিশাল তিমিটি তাদের নৌকার দিকে এগিয়ে আসে।

লভিট বলেন, “ম্যাক্সির জীবনে এটি ছিল সেরা দিন।”

ভিডিওতে দেখা যায়, তিমিটি নৌকার কাছে আসার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাক্সি উত্তেজিত হয়ে ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করে। তিমিটি যেন কুকুরের ডাকে সাড়া দিয়ে, কিছুক্ষণ তাদের দিকে তাকিয়ে ছিল।

লভিট বলেন, “সমুদ্রে ম্যাক্সির সবসময়ই আকর্ষণ, সে যেন সমুদ্র এবং তিমিদের ভালোবাসে।” তিনি আরও বলেন, “ম্যাক্সির বয়স এখন ১১ বছর, তাই আমি জানি না, আমরা আর কত দিন ওকে পাবো। কিন্তু এই ঘটনাটা ওর কাছে স্বপ্নের মতো ছিল, তাই আমি খুব খুশি।”

**অগ্নিকাণ্ডের স্মৃতি এবং ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প**

২০২৩ সালের ৮ই আগস্ট, লাহাইনার ভয়াবহ দাবানলে লভিটের তিমি দেখা বিষয়ক ব্যবসার ব্যাপক ক্ষতি হয়। তাঁর তিনটি নৌকা, সরঞ্জাম এবং অন্যান্য যানবাহন আগুনে পুড়ে যায়।

সেই ভয়াবহ দিনে, লভিট এবং তাঁর সহযোগী প্রবল বাতাসের মধ্যে তাঁদের নৌকাগুলো সুরক্ষিত করার চেষ্টা করছিলেন, যখন আগুন তাঁদের দিকে ধেয়ে আসে। তখন তাঁরা সমুদ্রে একটি নৌকায় আশ্রয় নেন এবং কোস্ট গার্ডের সঙ্গে মিলে যারা আগুনে আটকা পরে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাদের উদ্ধার করেন।

ডিসেম্বরে তাঁরা আবার ব্যবসা শুরু করেন এবং অগ্নিকাণ্ডের শিকার হওয়া মানুষদের জন্য বিনামূল্যে তিমি দেখার সুযোগ করে দেন। লভিট মনে করেন, তিমি দেখা তাঁদের এই ট্র্যাজেডি থেকে সেরে উঠতে সাহায্য করবে।

তিনি আশা করেন, এই মাসের শেষ পর্যন্ত ব্যবসা ভালো চলবে, কারণ এর পরেই তিমিগুলো আলাস্কার দিকে ফিরে যায়।

এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে একটি কঠিন সময়ে মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য ইচ্ছাই প্রতিফলিত হয়। একইসাথে, প্রকৃতির প্রতি মানুষের ভালোবাসা এবং পশুপাখির প্রতি মানুষের মমত্ববোধের এক সুন্দর চিত্র ফুটে উঠেছে।

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *