যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মীর ছাঁটাই অভিযান: সাবেক কর্মকর্তার বিস্ফোরক অভিযোগ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির নামে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন দেশটির সরকারি ডিজিটাল বিভাগের (ইউএস ডিজিটাল সার্ভিস-ইউএসডিএস) সাবেক এক কর্মী।
সম্প্রতি সিএনএন-এর সঙ্গে আলাপকালে মেরিসি ভিন্টন নামের ওই নারী জানান, সরকারি দপ্তরগুলোকে ছোট করার লক্ষ্যে একদল অদক্ষ লোক নিয়োগ করা হয়েছিল, যাদের কোনো ধারণা ছিল না কীভাবে সরকারি কাজগুলো সম্পন্ন করতে হয়।
তাদের ‘বিধ্বংসী’ কার্যক্রমের শিকার হয়ে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন।
মেরিসি ভিন্টন জানান, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ইউএসডিএস-কে ভেঙে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ (ডিওজিই) নামে একটি নতুন বিভাগ তৈরি করা হয়।
তার ভাষায়, এই বিভাগের কর্মীরা সরকারি নিয়ম-কানুন সম্পর্কে ছিলেন সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
সরকারি কাজকর্ম কীভাবে চলে, সে বিষয়ে তাদের কোনো ধারণাই ছিল না।
তারা যেন একটি বুলডোজার নিয়ে এসেছিলেন, যারা সবকিছু ভেঙে ফেলতে চাচ্ছিলেন।
মেরিসি বলেন, “সরকারের সংস্কৃতি অনেকটা সহযোগিতা ও ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল।
কিন্তু ডিওজিই-এর ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায়নি, তারা নিজেদের মতো করে সবকিছু করতে চেয়েছেন।”
২০২১ সালে মেরিসি ইউএসডিএস-এ যোগ দেন।
এই বিভাগটি মূলত সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে।
কোভিড-১৯ মহামারীর পর ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা এবং ট্যাক্স ব্যবস্থাপনাকে সহজ করতেও তিনি কাজ করেছেন।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ইউএসডিএস-কে ডিওজিইতে রূপান্তর করার পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়।
মেরিসি দেখেছেন, কীভাবে এই বিভাগটি সরকারি ব্যয় হ্রাস, কর্মী ছাঁটাই এবং ট্রাম্পের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সরকার পুনর্গঠনের মঞ্চে পরিণত হয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই হয়, অনেক চুক্তি বাতিল করা হয় এবং সরকারি ব্যয়ের হিসাব নিয়েও ভুল তথ্য দেওয়া হয়।
মেরিসি বলেন, “আমি আসলে এমন একটি পরিবেশে কাজ করতে চেয়েছিলাম, যেখানে মানুষের জন্য ভালো কিছু করা যায়।
সরকারি সুযোগ-সুবিধাগুলো যেন মানুষ সহজে পেতে পারে, কর দেওয়া ও রিফান্ড পাওয়া সহজ হয়—এগুলোই ছিল আমার লক্ষ্য।
কিন্তু ডিওজিই-এর কার্যক্রম দেখে মনে হয়েছে, তারা আসলে ভালো কিছু ভেঙে দিচ্ছে।”
মেরিসি জানান, ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের দিনই তারা জানতে পারেন যে ইউএসডিএস-কে ডিওজিইতে পরিণত করা হচ্ছে।
এর কয়েক দিন পরই বিভাগের কর্মীদের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, যেখানে তাদের যোগ্যতা এবং পছন্দের ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়।
মেরিসির মতে, এই প্রশ্নগুলো কাজের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না।
এর কিছুদিন পরই ৪৩ জন কর্মীকে বরখাস্ত করা হয় এবং আরও ২১ জন কর্মী প্রতিবাদস্বরূপ পদত্যাগ করেন।
পদত্যাগকারী কর্মকর্তাদের একজন এক চিঠিতে উল্লেখ করেন, তারা প্রযুক্তিবিদ হিসেবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমের ক্ষতি করতে অথবা জনগণের সংবেদনশীল ডেটা ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চান না।
মেরিসি ভিন্টন মনে করেন, ডিওজিই-এর মূল লক্ষ্য ছিল সরকারি কাঠামো দুর্বল করে দেওয়া, যা ভবিষ্যতে জনগণের জন্য সমস্যা তৈরি করবে।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, এটি একটি ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া।
এর ফলস্বরূপ আগামী বছরগুলোতে সরকারি পরিষেবা এবং সুযোগ-সুবিধা কমে যাবে।”
এই বিষয়ে ডিওজিই কর্মকর্তাদের মন্তব্য জানতে চাইলেও তারা কোনো সাড়া দেননি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।