“গৃহপালিত” প্রাণী: সংজ্ঞা নিয়ে বিজ্ঞানীদের নতুন বিতর্ক
আমরা চারপাশে যাদের দেখি, তাদের মধ্যে অনেকেই মানুষের কাছাকাছি থাকে। কুকুর, বিড়াল, গরু – এরা তো গৃহপালিত, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু ইঁদুর, তেলাপোকা বা মশা? এরাও কি তবে গৃহপালিত? সম্প্রতি, “ডমেস্টিকেশন” বা “গৃহপালিত” শব্দটির সংজ্ঞা নিয়ে বিজ্ঞানীরা নতুন করে বিতর্কে জড়িয়েছেন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি প্রতিবেদনে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এলিনর কার্লসন এবং ক্যাথরিন লর্ডের মতে, কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদকে গৃহপালিত বলার মূল ভিত্তি হলো, সেটি মানুষের তৈরি করা পরিবেশে টিকে থাকতে নির্ভরশীল।
অর্থাৎ, মানুষ না থাকলে তারা বাঁচতে পারবে না। লর্ড ও কার্লসন মনে করেন, এই সংজ্ঞা অনুযায়ী কুকুর, ইঁদুর এবং বিছানার পোকা—এরা সবাই গৃহপালিত। অন্যদিকে ঘোড়া বা মৌমাছির মতো প্রাণীরা, যারা মানুষের সাহায্য ছাড়াই বাঁচতে পারে, তারা গৃহপালিত নয়।
তবে, “গৃহপালিত” শব্দের সংজ্ঞা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, মানুষের ইচ্ছাকৃত প্রভাবেই কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ গৃহপালিত হয়।
তাদের মতে, মানুষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি প্রজাতিকে এমনভাবে পরিবর্তন করে, যা তাদের জন্য উপকারী। আবার কারো মতে, “গৃহপালিত” একটি পারস্পরিক সম্পর্ক—যেখানে প্রাণী বা উদ্ভিদ মানুষের সঙ্গে মানিয়ে নেয়, আবার মানুষও তাদের সঙ্গে বসবাসের জন্য নিজেদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনে।
উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞানীরা বলছেন, ধান একটি গৃহপালিত শস্য। কারণ, মানুষ যদি ধান চাষ না করে, তবে বন্য ধান সেই পরিবেশে টিকতে পারবে না।
একইভাবে, শহরের ইঁদুরেরা মানুষের আশেপাশে থাকতে অভ্যস্ত এবং মানুষের আবর্জনা বা খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল।
অন্যদিকে, কিছু বিজ্ঞানী এই সংজ্ঞার সঙ্গে একমত নন। তাদের মতে, এই নতুন সংজ্ঞা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
কারণ, অনেক প্রাণী মানুষের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিলেও, তাদের গৃহপালিত বলা যায় না। যেমন, বন্য পরিবেশে টিকে থাকা নেকড়ে বা অন্যান্য বন্যপ্রাণী।
এই বিতর্কের মূল কারণ হলো, মানুষ পরিবেশের ওপর কতটা প্রভাব ফেলেছে, সেই বিষয়ে নতুন করে আলোকপাত করা।
মানুষ ক্রমাগত প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করছে, ফলে অনেক প্রজাতি হয়তো মানুষের তৈরি পরিবেশে বাঁচতে বাধ্য হবে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এর ফলে ভবিষ্যতে গৃহপালিত প্রজাতির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
সুতরাং, “গৃহপালিত” শব্দটির সংজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকবে। তবে এই আলোচনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানুষ এবং প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্ক কতটা গভীর এবং জটিল।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক