যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছেন। শুক্রবার (গতকাল) মেরিল্যান্ডের বেথেসডার ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিকেল সেন্টারে এই পরীক্ষাটি সম্পন্ন হয়।
৭8 বছর বয়সী ট্রাম্প, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফল প্রকাশের বিষয়ে হোয়াইট হাউস বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
পরীক্ষার আগে ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘আমি আগে কখনও এত ভালো অনুভব করিনি, তবুও এই পরীক্ষাগুলো করা প্রয়োজন!’ তবে, পরীক্ষার বিস্তারিত সময় জানা যায়নি।
জানা গেছে পরীক্ষার পর তিনি প্রায় পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ওই কেন্দ্রে কাটিয়েছেন এবং পরে তিনি ফ্লোরিডার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
সাধারণত, প্রেসিডেন্টদের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য প্রকাশে স্বচ্ছতার অভাব দেখা যায়। অতীতে ট্রাম্পের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য গোপনীয় রাখার প্রবণতা ছিল, যেখানে তাঁর পূর্বসূরি জো বাইডেনের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যের অনেক কিছুই প্রকাশিত হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফল যত দ্রুত সম্ভব প্রকাশ করা হবে।
তিনি আরও জানান, পরীক্ষার সময় ট্রাম্পকে কোনো অ্যানেস্থেসিয়া (অবশ করার ওষুধ) দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি।
২০১৮ সালে, ট্রাম্প যখন প্রথম মেয়াদের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, হোয়াইট হাউসের একজন চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, তিনি সামগ্রিকভাবে চমৎকার স্বাস্থ্যবান, তবে তাঁর ওজন কমানো এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা প্রয়োজন।
এই স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগে, জনসাধারণের জন্য ট্রাম্পের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সবশেষ তথ্য প্রকাশিত হয়েছিল জুলাই মাসে, যখন তাঁর ওপর একটি হত্যাচেষ্টা হয়।
সেই সময় তাঁর স্বাস্থ্য বিষয়ক বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ না করে, টেক্সাসের একজন প্রতিনিধি রনি জ্যাকসন একটি স্মারকলিপি প্রকাশ করেন, যেখানে ট্রাম্পের ডান কানে আঘাতের কথা উল্লেখ করা হয়।
গত বছর, আগস্ট মাসে সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ‘স্বেচ্ছায়’ তাঁর স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য প্রকাশ করতে রাজি আছেন, কিন্তু পরে তা আর করেননি।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের চেয়ে তিন বছর ছোট হলেও, বাইডেনের দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ গ্রহণের সময় ট্রাম্পের বয়স বাইডেনের চেয়ে পাঁচ মাস বেশি ছিল।
এই কারণে ট্রাম্পই ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণকারী ব্যক্তি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার রয়েছে, যা সাধারণ নাগরিকদের মতোই।
তবে, আধুনিক সময়ে, বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষাগুলো একজন রাষ্ট্রপ্রধানের স্বাস্থ্যের ধারণা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
যদিও অতীতে কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা গোপন করার নজিরও রয়েছে, যেমন ১৯১৯ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের স্ট্রোকের ঘটনা।
অতীতে ট্রাম্প তাঁর স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা এড়িয়ে গিয়েছেন।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালের নভেম্বরে, ড. ব্রুস এ. আরোনওয়াল্ড বাইডেনের ৮১তম জন্মদিনে একটি চিঠি প্রকাশ করেন, যেখানে ট্রাম্পকে ‘চমৎকার’ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
তবে, ওই চিঠিতে ট্রাম্পের ওজন, রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মাত্রা বা কোনো পরীক্ষার ফল উল্লেখ করা হয়নি।
২০২০ সালের জুলাই মাসে একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প তাঁর মানসিক ক্ষমতা পরীক্ষার জন্য ‘পারসন, ওম্যান, ম্যান, ক্যামেরা, টিভি’ এই শব্দগুলো উল্লেখ করে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিলেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান