শেয়ার বাজারে সুবাতাস, রেকর্ড ছুঁতে চলেছে ডাউ জোন্স।
যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার, বিশেষ করে ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ (Dow Jones Industrial Average), আবারও নতুন করে রেকর্ড গড়তে চলেছে। শুক্রবার বাজারের শুরুতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশা জাগিয়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমানোর যে ইঙ্গিত দিয়েছে, তারই ফলস্বরূপ এই ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে।
শুক্রবারের বাজার চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ডাউ জোন্সের ফিউচার্স প্রায় ২৯০ পয়েন্ট বা ০.৬২% বৃদ্ধি পেয়েছে। এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক সামান্য বেড়েছে, এবং নাসডাক কম্পোজিট-এর ফিউচার্সও ঊর্ধ্বমুখী ছিল।
ইউনাইটেড হেলথ (UnitedHealth) -এর শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে থাকায় ডাউ জোন্সের এই উত্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে। জানা গেছে, বিখ্যাত বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেটের বার্কশায়ার হাথাওয়ে (Berkshire Hathaway) এই স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে, যার ফলে ইউনাইটেড হেলথের শেয়ারের চাহিদা বেড়েছে।
এই বছর এস অ্যান্ড পি ৫০০ এবং নাসডাক বেশ কয়েকবার নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে, কিন্তু ডাউ জোন্স এখনো সেই সুযোগ পায়নি।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়িয়েছে। সাধারণত, সুদের হার কমলে বন্ডের ফলন কমে যায়, যা শেয়ার বাজারের জন্য ভালো।
কারণ, তখন বিনিয়োগকারীরা বেশি লাভের আশায় শেয়ারে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডাউ জোন্সকে নতুন রেকর্ড ছুঁতে হলে বর্তমান স্তর থেকে সামান্য কিছু পয়েন্ট বাড়াতে হবে। বাজারের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, বিনিয়োগকারীরা ভালো মুনাফার আশা করতে পারেন।
এপ্রিল মাসের শুরুতে ডাউ জোন্স প্রায় ১৬ শতাংশ পর্যন্ত পড়ে গিয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে ঘুরে দাঁড়িয়ে এখন প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
শেয়ার বাজারের এই উত্থানের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। শক্তিশালী কর্পোরেট আয়ের ঘোষণা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।
জুলাই মাসের ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) প্রকাশিত হওয়ার পর, বাজারে স্বস্তি ফিরে আসে। কারণ, মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশা অনুযায়ী বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা আরও বেড়েছে।
তবে, উৎপাদক মূল্য সূচক (PPI)-এর তথ্য প্রকাশের পর বাজারের গতি কিছুটা কমে যায়।
জুলাই মাসে পাইকারি মূল্যস্ফীতি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর বিষয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে কিছু পণ্যের দাম বাড়লেও, বাজারের ওপর এর তেমন বড় প্রভাব পড়েনি।
বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা ফেডারেল রিজার্ভের সম্ভাব্য সুদ কমানো এবং শক্তিশালী আয়ের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন।
ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ১৮৯৬ সাল থেকে চালু আছে।
প্রথমে এই সূচকে ১২টি কোম্পানির শেয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা ১৯২৮ সালে ৩০টিতে উন্নীত করা হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, বাজারের পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে এই ৩০টি কোম্পানির তালিকাও পরিবর্তিত হয়েছে।
ডাউ জোন্স, এস অ্যান্ড পি ৫০০ এবং নাসডাক-এর মতো সূচকগুলো যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এই সূচকগুলো বিনিয়োগকারীদের বাজারের পরিস্থিতি বুঝতে সাহায্য করে এবং বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন