গণতান্ত্রিক কঙ্গো: কাবিলার মৃত্যুদণ্ড! তোলপাড়!

গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের (DRC) সাবেক প্রেসিডেন্ট জোসেফ কাবিলাকে রাষ্ট্রদ্রোহ ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি সামরিক আদালত। বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগসাজশ এবং দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগে মঙ্গলবার এই রায় ঘোষণা করা হয়।

তবে, কাবিলার অনুপস্থিতিতে এই রায় দেওয়া হয়েছে, কারণ তিনি বর্তমানে কোথায় আছেন, তা জানা যায়নি। খবরটি নিশ্চিত করেছে সিএনএন।

কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসার সামরিক আদালত এই রায় ঘোষণার পাশাপাশি কাবিলার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছে।

আদালতের অভিযোগ, রুয়ান্ডা সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী এম২৩-এর সঙ্গে মিলে কাবিলা সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছেন। চলতি বছরের শুরুতে বিদ্রোহী অধ্যুষিত একটি শহরে শেষবার দেখা যাওয়ার পর থেকে কাবিলার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

আদালত সূত্রে জানা যায় কাবিলা বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে প্রসিকিউশন বেশ কিছু সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছে।

এর মধ্যে অন্যতম ছিল বিদ্রোহী নেতা কর্নেল নাঙ্গার সাবেক চিফ অফ স্টাফ এরিক ন্‌কুবের জবানবন্দি। এর আগে, গত আগস্ট মাসে ন্‌কুবাকে বিদ্রোহের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।

আদালতে ন্‌কুবের সাক্ষ্যে বলা হয়েছে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স তশিসেকাদির সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য কাবিলা নিয়মিতভাবে নাঙ্গার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করতেন।

রায়ে কাবিলাকে ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে উত্তর কিভু প্রদেশের জন্য ২ বিলিয়ন এবং দক্ষিণ কিভু প্রদেশের জন্য ২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে। এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় কাবিলার রাজনৈতিক দল এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ‘অন্যায্য’ বলে অভিহিত করেছে।

দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী সরকার একজন প্রধান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নির্মূল করতে চাইছে।

অন্যদিকে, উত্তর ও দক্ষিণ কিভু প্রদেশের আইনজীবীরা আদালতের এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

তারা মনে করেন, কঙ্গোর জনগণের প্রতি ন্যায়বিচার করা হয়েছে।

জোসেফ কাবিলা ২০০১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত DRC-এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর পিতার মৃত্যুর পর ২৯ বছর বয়সে তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করেন।

২০১৭ সালে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তিনি নির্বাচনের তারিখ পিছিয়ে দুই বছর ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনে তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট তশিসেকাদির কাছে পরাজিত হন।

মে মাসে দেশটির সিনেট কাবিলার বিচারকার্য পরিচালনার পথ খুলে দিতে তাঁর দায়মুক্তি বাতিল করে, যা কাবিলা ‘স্বৈরাচারী’ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। কাবিলা বর্তমানে কোথায় আছেন তা জানা না গেলেও, তিনি এপ্রিল মাসে বিদ্রোহী অধ্যুষিত একটি শহর গোমায় ফিরে এসেছিলেন।

উল্লেখ্য, DRC-তে দশকের পর দশক ধরে চলা সংঘাত গত জানুয়ারিতে এম২৩ বিদ্রোহীদের অগ্রাভিযানের পর আরও তীব্র হয়। বিদ্রোহীরা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ গোমা শহর এবং ফেব্রুয়ারিতে বুকাভু শহর দখল করে নেয়।

এই সংঘর্ষে প্রায় ৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যা একটি গুরুতর মানবিক সংকট তৈরি করেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *