গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের (DRC) প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জোসেফ কাবিলাকে তার দায়মুক্তি থেকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছে দেশটির সিনেট। বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত এক গোপন ভোটে ৮৮ জন সদস্যের সমর্থনে কাবিলার দায়মুক্তি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়, যেখানে বিপক্ষে ভোট দেন মাত্র ৫ জন সিনেটর।
এর ফলে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন তিনি।
কাবিলাকে রুয়ান্ডার মদদে পূর্বাঞ্চলে বিস্তৃত অঞ্চল দখলের সঙ্গে জড়িত সশস্ত্র গোষ্ঠী এম২৩-এর সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, কাবিলা দেশদ্রোহিতা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং বিদ্রোহে জড়িত ছিলেন—এমন সুস্পষ্ট প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে।
যদিও কাবিলার পক্ষ থেকে বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
প্রায় দুই দশক ক্ষমতায় থাকার পর ২০১৮ সালে ক্ষমতা ছাড়েন কাবিলার। তবে, তিনি আজীবন সিনেটর হিসেবে দায়মুক্তির সুবিধা ভোগ করছিলেন।
কঙ্গোর সেনাবাহিনীর অ্যাটর্নি জেনারেল এই দায়মুক্তি প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছিলেন। সিনেটের স্পিকার জঁ-মিশেল সামা লুকোন্দে ভোটের পর জানান, “সিনেট জোসেফ কাবিলাকে বিচারের অনুমতি দিয়েছে এবং তার দায়মুক্তি প্রত্যাহার করেছে।”
ক্ষমতা হারানোর পর থেকেই কাবিলা প্রতিবেশী দেশগুলোতে অবস্থান করছেন। তিনি বর্তমানে বেশিরভাগ সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় কাটাচ্ছেন।
তবে, পূর্বাঞ্চলে চলমান সংঘাত নিরসনে সাহায্য করতে এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স তশিসেকদির সরকারের সমালোচনার উদ্দেশ্যে তিনি দেশে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
জানা গেছে, কাবিলা এম২৩ বিদ্রোহীদের সমর্থন করছেন এবং পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিচ্ছেন—এমন অভিযোগ তুলেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট তশিসেকদি। এরই মধ্যে কাবিলা সংশ্লিষ্ট পিপলস পার্টি ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (PPRD)-কে স্থগিত করা হয়েছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী তার বেশ কয়েকটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে।
যদিও PPRD-এর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ফার্দিনান্দ কাম্বেরে এই বিচার প্রক্রিয়াকে “নাটক” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার মতে, এটি দেশের মানুষ ও তাদের মনোযোগকে এখানকার সংঘাত ও দুর্নীতির আলোচনা থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা।
এদিকে, পূর্বাঞ্চলে এম২৩ বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর মধ্যে লড়াই এখনো অব্যাহত রয়েছে। জানুয়ারিতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি গোমা শহর দখল করে এবং ফেব্রুয়ারিতে বুকাভু শহরও তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
বিদ্রোহীদের লক্ষ্য হলো পূর্বাঞ্চলের খনিজ সম্পদ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া এবং কিনশাসায় ক্ষমতা দখল করা। শান্তি আলোচনার জন্য সম্প্রতি কাতার-এর রাজধানী দোহায় সরকার এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা