যুদ্ধবিরতির ঘোষণা: ডিআর কঙ্গোতে শান্তি ফিরছে?

গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (DRC) এবং রুয়ান্ডা সমর্থিত এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠী সম্প্রতি কাতারের রাজধানী দোহায় শান্তি আলোচনার পর যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে কঙ্গোতে চলমান সহিংসতা বন্ধের একটি চেষ্টা করা হচ্ছে, যেখানে জানুয়ারিতে এম২৩ বিদ্রোহীদের আক্রমণে দেশটির দুটি প্রধান শহর দখল হয়।

বুধবার উভয় পক্ষই অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ এবং ঘৃণা ভাষণ বা কোনো প্রকার ভীতি প্রদর্শন না করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে।

আলোচনা সূত্রে জানা গেছে, এই যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলাকালীন সময়ে এবং এর সমাপ্তি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। কাতার কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স-সিশেকেদি এবং রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের মধ্যে গত মাসে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ধারণা করা হচ্ছে, সেই বৈঠকের ফলেই ডিআরসি এবং এম২৩-এর মধ্যে সরাসরি আলোচনার পথ খুলে যায়, যা কঙ্গো সরকার আগে প্রত্যাখ্যান করেছিল।

কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলীয় শহর গোমা থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক জানিয়েছেন, অনেকবার আলোচনার ব্যর্থতার পর উভয় পক্ষের শান্তি প্রতিষ্ঠার আগ্রহ একটি ইতিবাচক দিক। তবে, দক্ষিণ কিভু প্রদেশে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা এই যুদ্ধবিরতি কতখানি টেকসই হবে, সেই বিষয়ে সন্দেহ তৈরি করে।

বহু বছর ধরে চলা এই সংঘাতের মূল কারণ হলো ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডান গণহত্যা। এম২৩ মূলত তুতসি সম্প্রদায়ের যোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত। এদের অনেকেই একসময় কঙ্গোর সেনাবাহিনীতে ছিল, পরে তারা বৈষম্য ও আগের শান্তি চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে বিদ্রোহ করে।

২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ছয়টি যুদ্ধবিরতি চুক্তি উভয় পক্ষ মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে। জানুয়ারী মাস থেকে শুরু হওয়া সর্বশেষ সহিংসতায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ডিআরসি, জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা দেশগুলো রুয়ান্ডাকে এম২৩ বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও সৈন্য দিয়ে সাহায্য করার অভিযোগ করেছে, যদিও রুয়ান্ডা বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

তবে, রয়টার্স সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, ডিআরসি সরকার এবং এম২৩-এর কিছু সূত্র আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে অসন্তুষ্ট। তাদের মতে, রুয়ান্ডার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক ডিআরসি বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার মতো আস্থা-প্রতিষ্ঠামূলক কিছু পদক্ষেপ নিয়ে মতবিরোধের কারণে চুক্তি ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

অবশেষে, কাতার দুই পক্ষকে একটি যৌথ বিবৃতি দিতে রাজি করাতে সক্ষম হয়, যেখানে তারা যুদ্ধবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়। বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রিভো বুধবার এক টুইট বার্তায় বলেছেন, “সহিংসতা বন্ধের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

এএফপি সংবাদ সংস্থার অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, “আসন্ন সপ্তাহগুলোতে” দোহায় “আলোচনার আরও গভীর একটি পর্যায়” অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *