শিরোনাম: ভ্যাকসিনের সত্যতা তুলে ধরতে এক ডাক্তারের লড়াই: বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিরুদ্ধে এক যোদ্ধার গল্প
কোভিড-১৯ অতিমারীর সময়কালে ভ্যাকসিন নিয়ে ভুল তথ্যের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড হেলথ কেয়ারের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জ্যাক স্কট। তিনি এখন এই মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে এক কঠিন লড়াইয়ে নেমেছেন, যার মূল লক্ষ্য হলো মানুষকে ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করা।
বিশেষ করে, ভ্যাকসিন বিরোধী প্রচারণা চালানো কিছু ব্যক্তির অপপ্রচার রুখতে তিনি দিনরাত কাজ করছেন।
ডা. স্কট বর্তমানে ক্যালিফোর্নিয়ার প্লেজেন্টনে অবস্থিত একটি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। রোগীদের দেখাশোনা করার পাশাপাশি তিনি নিয়মিতভাবে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে গবেষণা করেন, নিবন্ধ লেখেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভ্যাকসিনের সত্যতা তুলে ধরেন।
তার প্রধান লক্ষ্য হলো, ভ্যাকসিন নিয়ে যারা ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা। এক্ষেত্রে তিনি বিশেষ করে সাবেক মার্কিন স্বাস্থ্য সচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রের (Robert F. Kennedy Jr.) ভ্যাকসিন বিরোধী বিভিন্ন মন্তব্যের জবাব দিয়ে থাকেন।
ডা. স্কটের মতে, ভ্যাকসিন নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর কারণে মানুষ মারাত্মক ক্ষতির শিকার হতে পারে। এই ভুল তথ্যের কারণে অনেক পরিবার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয় এবং এর ফলস্বরূপ মারাত্মক রোগব্যাধিগুলো আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
বর্তমানে, আমেরিকাতেও হাম ও হুপিং কাশির মতো রোগগুলো বাড়ছে, যা উদ্বেগের কারণ।
ডা. স্কট মনে করেন, কোভিড-১৯ এর সময়কালে যেমন একটি অতিমারী দেখা গিয়েছিল, তেমনি ভ্যাকসিন নিয়ে ভুল তথ্য ছড়ানোর কারণে আরেকটি “ইনফোডেমিক” বা তথ্যের অতিমারী সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, “আমি দেখেছি, ভুল তথ্যের কারণে মানুষ কীভাবে ভ্যাকসিন নেওয়া থেকে বিরত থাকে এবং এর ফলস্বরূপ তাদের জীবনে কতটা ট্র্যাজেডি নেমে আসে।”
ডা. স্কটের এই লড়াই ব্যক্তিগতভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২০ সালে, তিনি কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা করার সময় অনেক তরুণ ও সুস্থ মানুষকেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর শিকার হতে দেখেছেন।
তিনি বলেন, “আমি আমার রোগীদের জন্য শতভাগ চেষ্টা করেছি, কিন্তু অনেককে বাঁচাতে পারিনি।” ভ্যাকসিন আসার পরেই পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হতে শুরু করে।
ডা. স্কটের মতে, ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ফলে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হতে শুরু করে এবং মৃত্যুর হারও কমে আসে। তিনি উল্লেখ করেন যে, ভ্যাকসিন আসার আগে বয়স্ক রোগীদের বাঁচানো কঠিন ছিল, কিন্তু ভ্যাকসিনের কারণে তাদের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
ডা. স্কটের এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজ রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি-এর পরিচালক ড. মাইকেল ওস্টারহোম তাকে ভ্যাকসিন বিষয়ক গবেষণায় সহায়তা করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
ড. ওস্টারহোম মনে করেন, ডা. স্কট জটিল বিষয়গুলো সহজভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারেন এবং তার কাজের প্রতি রয়েছে গভীর নিষ্ঠা।
ডা. স্কটের চিকিৎসক হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে এক ভিন্ন গল্প। তিনি ছোটবেলায় একটি বাইসাইকেল দোকানে কাজ করতেন এবং পরবর্তীতে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবেও কাজ করেছেন।
তার এই বিচিত্র অভিজ্ঞতা তাকে মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে শিখিয়েছে, যা একজন চিকিৎসকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মনে করেন, মানুষের জীবনের গল্প জানা থাকলে অনেক সময় রোগ নির্ণয় সহজ হয়।
ডা. স্কটের মতে, মানুষের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়া এবং ভ্যাকসিনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, সঠিক তথ্যের অভাবে অনেক মানুষ ভুল পথে পরিচালিত হতে পারে, যা তাদের স্বাস্থ্য ও জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন