আতঙ্কের রাজাদের রহস্য উন্মোচন: মঙ্গোলিয়ার ড্রাগন প্রিন্স!

ডাইনোসর জগৎ নিয়ে গবেষণা সবসময়ই কৌতূহলোদ্দীপক। সম্প্রতি, মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভূমিতে পাওয়া একটি নতুন প্রজাতির ডাইনোসরের আবিষ্কার সেই জগৎকে আরও একধাপ এগিয়ে দিয়েছে।

বিজ্ঞানীরা এই নতুন ডাইনোসরের নামকরণ করেছেন ‘খাংখুুলু মঙ্গোলিয়েনসিস’ (Khankhuuluu mongoliensis)। প্রায় ৮৬ মিলিয়ন বছর আগে এদের বিচরণ ছিল, যা টাইর‍্যানোসরাস রেক্স (Tyrannosaurus rex) -এর বিবর্তনের ধারা বুঝতে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

খাংখুুলু মঙ্গোলিয়েনসিস, আকারে টি-রেক্স-এর তুলনায় অনেক ছোট ছিল। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই নতুন আবিষ্কৃত প্রজাতিটি টাইর‍্যানোসরের আদি পূর্বপুরুষদের সঙ্গে পরবর্তীকালের বিশাল আকারের মাংসাশী ডাইনোসরদের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি।

গবেষণা বলছে, এশিয়া এবং উত্তর আমেরিকার মধ্যে কয়েকবার এদের স্থান পরিবর্তন হয়েছিল, যার ফলস্বরূপ টাইর‍্যানোসররা বিবর্তিত হয়ে বিশাল আকার ধারণ করতে সক্ষম হয়।

ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালগারির একজন সহযোগী অধ্যাপক ড. ডারলা জিলেনিটস্কি এই আবিষ্কার সম্পর্কে বলেন, “খাংখুুলুর আবিষ্কার টাইর‍্যানোসর পরিবারের বিবর্তন বিষয়ক ধারণা সম্পূর্ণ নতুনভাবে পর্যালোচনা করতে বাধ্য করেছে।

আগে, টাইর‍্যানোসর প্রজাতিগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা কঠিন ছিল। নতুন এই আবিষ্কারের মাধ্যমে টাইর‍্যানোসরদের বংশতালিকা নতুন করে লেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে।”

টাইর‍্যানোসর (মাংসাশী ডাইনোসর গোত্র) -এর কথা মনে হলেই আমাদের চোখের সামনে বিশাল আকারের টি-রেক্স-এর ছবি ভেসে ওঠে। এরা ছিল শক্তিশালী, মাংসাশী এবং তীক্ষ্ণ দাঁত ও ছোট হাত বিশিষ্ট।

কিন্তু টাইর‍্যানোসরদের বিবর্তন সেভাবে হয়নি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এরা ছোট আকারের ডাইনোসর থেকে বিবর্তিত হয়ে উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ায় রাজত্ব করেছে।

খাংখুুলুর ওজন ছিল প্রায় ৭৫০ কিলোগ্রাম এবং উচ্চতা ছিল ৪ মিটার। অন্যদিকে, টি-রেক্স-এর পূর্বপুরুষ টারবোসরাসের ওজন ছিল ৩,০০০ থেকে ৬,০০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রায় ৮৫ মিলিয়ন বছর আগে আলাস্কা ও সাইবেরিয়ার মধ্যে সংযোগকারী একটি ভূমি সেতুবন্ধের মাধ্যমে খাংখুুলু বা তার কাছাকাছি কোনো প্রজাতি এশিয়া থেকে উত্তর আমেরিকায় গিয়েছিল।

এই ঘটনার পরেই টাইর‍্যানোসররা উত্তর আমেরিকায় বিস্তার লাভ করতে শুরু করে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আকারে বাড়তে থাকে।

এই সময়কালে, এশিয়ায় কী ঘটেছিল, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, প্রায় ৭৯ মিলিয়ন বছর আগে সম্ভবত বৃহত্তর আকারের টাইর‍্যানোসররা খাংখুুলুর স্থান দখল করে নেয়।

এরপর, ৭৮ মিলিয়ন বছর আগে, আরেকটি টাইর‍্যানোসর প্রজাতি ভূমি সেতু পেরিয়ে পুনরায় এশিয়ায় ফিরে আসে। এর ফলে টাইর‍্যানোসরদের দুটি ভিন্ন উপ-শ্রেণী তৈরি হয় – একটি বিশাল আকারের এবং অন্যটি ছোট আকারের, যাদের ‘পিনোচিও রেক্স’ (Pinocchio rexes) নামেও ডাকা হয়।

ছোট আকারের এই ডাইনোসরদের ছোট শিকারের প্রতি আগ্রহ ছিল, যা তাদের টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। প্রায় ৬৮ মিলিয়ন বছর আগে, আরেকটি বিশাল টাইর‍্যানোসর প্রজাতি উত্তর আমেরিকায় ফিরে আসে, যার ফলস্বরূপ টি-রেক্সের উদ্ভব হয়।

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিদ্যায় ডক্টরাল ছাত্র ক্যাসিয়াস মরিসন এই আবিষ্কারের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, “এই নতুন প্রজাতিটি টাইর‍্যানোসর পরিবারের বিবর্তনের ধারা বুঝতে সহায়তা করবে, যা ছোট থেকে বড় আকারের শিকারী প্রাণীতে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে তুলে ধরে।”

এডিনবার্গের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভ ব্রুসাতে আরও যোগ করেন, “এই আবিষ্কারের ফলে টাইর‍্যানোসরদের বিবর্তনের ইতিহাস নতুনভাবে সাজানো সম্ভব হবে।

এটি অনেকটা আমাদের পারিবারিক ইতিহাসের মতো, যেখানে অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”

উইসকনসিনের কার্থেজ কলেজের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক থমাস ক্যার-এর মতে, “এই গবেষণা ডাইনোসরদের বৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে সাহায্য করে।”

আবিষ্কৃত জীবাশ্মগুলি প্রায় অর্ধশতক পুরনো, তবে সেগুলির সঠিক বিশ্লেষণ এখনো হয়নি। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই আবিষ্কার টাইর‍্যানোসরদের সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান আরও অনেক বাড়িয়ে দেবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *