গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (DRC)-এর সরকার এবং রুয়ান্ডা-সমর্থিত এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠী দেশটির পূর্বাঞ্চলে লড়াই বন্ধ করতে রাজি হয়েছে। এটি একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা, যা দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
কাতার সরকারের মধ্যস্থতায় আলোচনার পর উভয় পক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কয়েক দশক ধরে কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে অস্থিরতা চলছে। এখানকার মূল সমস্যা হলো বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যেকার বিভেদ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকার নিয়ে লড়াই।
এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠী এই অঞ্চলের প্রধান শহরগুলোতে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং অনেকে নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ এবং পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, রুয়ান্ডা সরকার এম২৩ গোষ্ঠীকে সমর্থন করছে। যদিও রুয়ান্ডা সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আলোচনায় বসার আগে, কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স তশিসেকেদি এম২৩-এর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে রাজি ছিলেন না। তিনি এম২৩-কে রুয়ান্ডার মদদপুষ্ট একটি গোষ্ঠী হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন।
কিন্তু কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া আলোচনার ফলে পরিস্থিতি পাল্টেছে। কাতার সরকার মধ্যপ্রাচ্যের একটি প্রভাবশালী দেশ এবং তারা কঙ্গো ও রুয়ান্ডার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করেছে।
কাতার সরকার উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনাকে উৎসাহিত করছে এবং একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য কাজ করতে চাইছে।
আলোচনা শুরুর আগে, কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স তশিসেকেদি এবং রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামে কাতারে বৈঠক করেন এবং যুদ্ধবিরতির প্রতি সমর্থন জানান।
কাতার সরকারের মুখপাত্র মাজিদ আল-আনসারি এই যৌথ বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, উভয় পক্ষকে “কঙ্গোর জনগণের শান্তি ও উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা” অনুযায়ী একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য কাজ করতে হবে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একটি সূত্র জানিয়েছে, দোহায় অনুষ্ঠিত আলোচনাগুলো “গঠনমূলক” ছিল।
এই সূত্র আরও জানায়, উভয় পক্ষই এখন একটি ব্যাপক রাজনৈতিক সমাধানের ভিত্তি তৈরির জন্য আরও গভীর আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
খুব সম্ভবত আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তারা আবার দোহায় বৈঠকে বসবে।
বর্তমানে, কাতার রুয়ান্ডা ও কঙ্গোর সঙ্গে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কঙ্গোর রাজধানী কিগালির কাছে একটি নতুন বিমানবন্দর নির্মাণে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করা।
অন্যদিকে, রুয়ান্ডা সরকার কঙ্গোতে তাদের সামরিক উপস্থিতির কথা স্বীকার করে না, তবে সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানায়।
তারা কঙ্গোতে রুয়ান্ডা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত হুতু মিলিশিয়াদের নির্মূল করার দাবি জানিয়েছে।
এই যুদ্ধবিরতি কত দিন স্থায়ী হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
এর আগে, ২০১৬ সাল থেকে একাধিক যুদ্ধবিরতি এবং শান্তি চুক্তি ভেঙে গেছে।
এখন দেখার বিষয়, কঙ্গো সরকার ও এম২৩ গোষ্ঠীর মধ্যে হওয়া এই নতুন সমঝোতা কতটুকু সফল হয় এবং সেখানকার মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসে কিনা।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান