ধ্বংসস্তূপ থেকে পুনর্জন্ম: ড্রেসডেনের সাংস্কৃতিক উত্তরণ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা আজও জার্মান শহর ড্রেসডেনের আকাশে-বাতাসে। ১৯৪৫ সালে মিত্রশক্তির বোমা হামলায় শহরটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল।
কিন্তু সেই ধ্বংসস্তূপের বুক চিরে ড্রেসডেন আবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে। আজকের ড্রেসডেন শুধু একটি শহর নয়, বরং ঘুরে দাঁড়ানোর এক অসাধারণ গল্প।
ড্রেসডেনের পুনর্গঠন যেন এক মহাকাব্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শহরের অনেক ঐতিহাসিক স্থাপত্য ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তবে এখানকার মানুষের অদম্য ইচ্ছাশক্তি ছিল তাদের সম্বল।
পুরনো ধাঁচে শহরটিকে নতুন করে গড়ার পরিকল্পনা করা হয়। এর ফলস্বরূপ, পুরনো প্রাসাদের স্থাপত্যশৈলী থেকে শুরু করে আধুনিক শিল্পকলা—সবকিছুতেই ফিরে এসেছে নতুনত্ব। ফ্রাউয়েনকিরখে (Our Lady’s Church)-এর মতো স্থাপত্যগুলো নতুন করে তৈরি করা হয়েছে, যা শহরের পুরনো গৌরব ফিরিয়ে এনেছে।
ড্রেসডেনের সংস্কৃতি শুধু স্থাপত্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এখানকার মিউজিয়ামগুলোতে গেলে দেখা যায়, কীভাবে ঐতিহ্য আর আধুনিকতা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। আর্খাইভ ডেয়ার আভাংগার্টেন (Archiv der Avantgarden) তেমনই একটি স্থান, যেখানে আধুনিক শিল্পের এক বিশাল সংগ্রহ রয়েছে।
পুরনো ‘ব্লকহাউস’ (Blockhaus)-কে সংস্কার করে এই আর্ট মিউজিয়াম তৈরি করা হয়েছে। এখানে বাউহাউস চেয়ার থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর ‘ডি ব্রুক’ (Die Brücke) শিল্পগোষ্ঠীর চিত্রকর্ম—সবকিছুই বিদ্যমান।
ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটেছে এখানকার শিল্পকর্মেও। উদাহরণস্বরূপ, মেইসেন (Meissen) সিরামিক কোম্পানি, যারা ইউরোপের প্রথম চীনামাটির বাসন তৈরি করেছিল। তাদের তৈরি করা মার্লিন মনরোর মূর্তিটি আধুনিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এছাড়াও, এখানকার শিল্পী মাইকেল মোবিয়াসের (Michael Moebius) কাজগুলোও বেশ জনপ্রিয়।
ড্রেসডেনের সংস্কৃতিতে সঙ্গীতেরও এক বিশেষ স্থান রয়েছে। এখানকার ‘স্টাাটসকাপেল ড্রেসডেন’ (Staatskapelle Dresden) বিশ্বের প্রাচীনতম অর্কেস্ট্রাগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেম্পারওপার (Semperoper) অপেরা হাউসটিও যুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তবে পরে এটিকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
ঐতিহ্য আর আধুনিকতার এই মিশেল ড্রেসডেনকে দিয়েছে এক নতুন পরিচয়। এখানে পুরাতন এবং নতুনের মধ্যে এক সুন্দর সমন্বয় দেখা যায়। যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে এসে ড্রেসডেন প্রমাণ করেছে, ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা মানুষের মধ্যে সবসময়ই থাকে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক