যুক্তরাজ্যে গাড়ি চালানো শেখা এখন কঠিন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে খরচ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে, আর পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে মাসের পর মাস। উন্নত বিশ্বে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে, স্বাধীনতা ও স্বনির্ভরতার প্রতীক হিসেবে গাড়ি চালানো শেখার আগ্রহ অনেকেরই।
কিন্তু এই স্বপ্ন এখন যেন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি।
গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ নেওয়া থেকে শুরু করে থিওরি ও প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা দেওয়া পর্যন্ত—পুরো প্রক্রিয়াটি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং অনিশ্চিত।
বর্তমানে, ড্রাইভিং টেস্টের জন্য অপেক্ষার গড় সময় গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ সপ্তাহে! ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে এই সময় কমিয়ে ৭ সপ্তাহে আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
ড্রাইভিং শেখার খরচগুলোও আকাশছোঁয়া।
একটি লার্নার্স পারমিট বা শিক্ষানবিশ লাইসেন্স পেতে অনলাইন আবেদন করলে খরচ হয় প্রায় ৪,৭০০ টাকার মতো (মে মাসের মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী)। আর ডাকযোগে আবেদন করলে খরচ হবে প্রায় ৫,৯০০ টাকা।
এরপর আসে তত্ত্বীয় পরীক্ষার (থিওরি টেস্ট) খরচ, যা প্রায় ৩,০০০ টাকা।
গাড়ি চালনার প্রশিক্ষণও বেশ ব্যয়বহুল।
প্রশিক্ষকের ফি সাধারণত ঘণ্টাপ্রতি ৩,০০০ থেকে ৫,৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। সাধারণত, একজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গড়ে ৪৫ ঘণ্টার মতো প্রশিক্ষণ নিতে হয়।
সবমিলিয়ে, শুধু প্রশিক্ষণের পেছনেই প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার বেশি খরচ হতে পারে।
যুক্তরাজ্যে এক একটি এলাকার প্রশিক্ষণ ফি-এর তারতম্য রয়েছে।
যেমন, লন্ডনে প্রতি ঘণ্টার জন্য প্রশিক্ষণ ফি প্রায় ৫,৫০০ টাকার কাছাকাছি।
এছাড়াও, যারা দ্রুত প্রশিক্ষণ নিতে চান, তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ কোর্স, যার খরচ ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার বেশি।
গাড়ি চালানোর সময় প্র্যাকটিসের জন্য অন্য কারও গাড়ির সাহায্য নিলে, বীমার খরচও যোগ হয়।
বিভিন্ন বীমা কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী, এই খরচও কয়েক হাজার টাকা থেকে শুরু করে বাড়তে পারে।
ড্রাইভিং টেস্টের ফি-ও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
কর্মদিবসে পরীক্ষা দিতে খরচ হয় প্রায় ৮,০০০ টাকা, আর সাপ্তাহিক ছুটি বা সরকারি ছুটির দিনে পরীক্ষা দিতে খরচ হয় প্রায় ৯,৭০০ টাকা।
পরীক্ষার জন্য অপেক্ষার দীর্ঘসূত্রিতা এবং খরচ বাড়ায় অনেক শিক্ষার্থীর মাঝে হতাশা দেখা যায়।
পরীক্ষায় পাস করার হারও খুব বেশি নয়।
প্রথমবার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার হার প্রায় ৪৮.৫ শতাংশ।
যুক্তরাজ্যের এই চিত্র আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে হয়তো সরাসরি মেলে না, তবে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে যে জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা, তা অনেক ক্ষেত্রেই একইরকম।
উন্নত বিশ্বে যদি এমন হয়, তবে আমাদের এখানেও প্রস্তুতি এবং অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই।
তথ্য সূত্র: The Guardian