ড্রোনগুলি এখন প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিমানবন্দরগুলির কাছাকাছি উড়ছে, যা উড়োজাহাজগুলির জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। আকাশপথে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যাটি এখনই সমাধান করা দরকার, অন্যথায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশটির ব্যস্ততম ৩০টি বিমানবন্দরে বাণিজ্যিক বিমানের কাছাকাছি ড্রোন উড়ানের ঘটনা ঘটেছে, যা আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। ২০১৯ সাল থেকে ড্রোন বিষয়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়তে শুরু করে, তবে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ২০২০ সালে এই সংখ্যা কিছুটা কমে গিয়েছিল। কিন্তু এরপর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
এই ঘটনার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, ড্রোনগুলোর ব্যবহার বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে এর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা। এখন সাধারণ মানুষ সহজেই ইন্টারনেট থেকে অত্যাধুনিক ড্রোন কিনতে পারে, যা বিমানবন্দরের আশেপাশে অননুমোদিতভাবে ওড়ার সম্ভাবনা বাড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সমস্যা মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তারা ড্রোন ব্যবহারকারীদের শনাক্ত করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে, বিমানবন্দরের কাছাকাছি এলাকায় ড্রোন ওড়ানো বন্ধ করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এছাড়াও, ড্রোন প্রস্তুতকারকদের তাদের পণ্যে জিওফেন্সিং প্রযুক্তি যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। জিওফেন্সিং হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যা নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে ড্রোন ওড়ানোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সীমাবদ্ধ করে।
তবে, ড্রোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ডিজেআই (DJI) সম্প্রতি তাদের ড্রোনগুলোতে জিওফেন্সিংয়ের এই সুবিধাটি বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের মতে, এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে অনুমোদিত ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অনেক বেশি অনুরোধ আসছিল, যা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছিল।
এই পরিস্থিতিতে, FAA জানিয়েছে তারা ড্রোন ব্যবহারের ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, বিমানবন্দরের কাছাকাছি ড্রোন ওড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা। এছাড়া, তারা ড্রোন শনাক্ত ও প্রতিরোধের জন্য নতুন প্রযুক্তি পরীক্ষা করছে। এই প্রযুক্তির মধ্যে রেডিও সংকেত ব্যবহার করে ড্রোনকে অকার্যকর করা অথবা জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য করা অন্যতম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়ে আরও সক্রিয় হতে হবে। তাদের মতে, সড়কে গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যেমন ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়, তেমনিভাবে ড্রোন ব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে যারা নিয়ম ভাঙবে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
বাংলাদেশেও বর্তমানে ড্রোন ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। ছবি তোলা, ভিডিও ধারণ বা বিভিন্ন জরিপ কাজের জন্য মানুষজন ড্রোন ব্যবহার করছে। তবে, বিমানবন্দরের কাছাকাছি ড্রোন ওড়ানোর ক্ষেত্রে এখানেও কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকেও ড্রোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিষয়ক নিয়মকানুন আরও কঠোরভাবে পর্যালোচনা করতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস