আপনার দুঃস্বপ্ন কি কোনো উদ্বেগের সংকেত?
ছোটবেলার কথা মনে আছে? রাতের বেলা ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে চিৎকার করে ওঠা, বুক ধড়ফড় করা, অথবা ঘুমের ঘোরে দুঃস্বপ্ন দেখে আঁতকে ওঠা—এমন অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকেরই আছে।
দুঃস্বপ্ন আসলে কী? কেনই বা এটি হয়? বিজ্ঞান বলছে, দুঃস্বপ্ন আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে গভীর সম্পর্কযুক্ত।
গবেষণা বলছে, দুঃস্বপ্ন একটি সাধারণ ঘটনা। জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল স্লিপ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় ১,২০০ জনের বেশি মানুষের মধ্যে দুঃস্বপ্নের কিছু সাধারণ বিষয় খুঁজে পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—উঁচু স্থান থেকে পড়ে যাওয়া, কোনো হিংস্র প্রাণী দ্বারা তাড়িত হওয়া, অসহায় বোধ করা, অথবা প্রিয়জনের মৃত্যু। এছাড়াও, ঘুমের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া বা কোনো ফাঁদে আটকা পড়ার মতো বিষয়গুলোও অনেকের দুঃস্বপ্নের কারণ।
পুরুষ ও মহিলাদের দুঃস্বপ্নের ধরনেও কিছু পার্থক্য দেখা যায়। যেমন, শারীরিক আক্রমণের শিকার হওয়া এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত উদ্বেগের বিষয়গুলো নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
অন্যদিকে, পুরুষদের মধ্যে অসহায়ত্ব এবং দুর্ঘটনার মতো দুঃস্বপ্ন বেশি হতে পারে। আমেরিকাস্লিপ নামের একটি জরিপেও একই ধরনের ফল পাওয়া গেছে।
তাদের সমীক্ষায়, প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন যে তারা প্রায়ই মৃত্যু, হারিয়ে যাওয়া অথবা বন্দী হওয়ার মতো দুঃস্বপ্ন দেখেন। নারীদের মধ্যে প্রিয়জনের মৃত্যু বিষয়ক দুঃস্বপ্ন বেশি দেখা যায় (প্রায় ৬০ শতাংশ)।
কিন্তু দুঃস্বপ্ন কি শুধু একটি খারাপ অভিজ্ঞতা, নাকি এর অন্য কোনো অর্থ আছে? মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের অবচেতন মনে লুকিয়ে থাকা অনেক আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে স্বপ্নের মাধ্যমে।
দুঃস্বপ্ন হয়তো সেই মানসিক উদ্বেগেরই একটি সংকেত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত দুঃস্বপ্ন আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, যারা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন—পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি), গুরুতর ডিপ্রেশন বা উদ্বেগে ভুগছেন, তাদের দুঃস্বপ্ন বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পিটিএসডি-তে আক্রান্ত প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখেন।
শুধু মানসিক স্বাস্থ্য নয়, শারীরিক কিছু সমস্যাও দুঃস্বপ্নের কারণ হতে পারে। যেমন—মাইগ্রেন বা অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রেও দুঃস্বপ্ন বেশি দেখা যায়।
ঘুমের ওষুধসহ কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও এমনটা হতে পারে।
তাহলে, দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী? স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
ঘুমের সময় স্ক্রিন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা, ক্যাফিন ও অ্যালকোহল ত্যাগ করা, এবং নিয়মিত ঘুমের একটি রুটিন তৈরি করা—এগুলো ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে।
যদি আপনার প্রায়ই দুঃস্বপ্ন হয় এবং এর কারণে ঘুমের সমস্যা হয়, তবে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ দুঃস্বপ্ন হয়তো আপনার শরীরের ভেতরের কোনো সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মনে রাখতে হবে, দুঃস্বপ্ন কোনো ভয়ের বিষয় নয়, বরং এটি আপনার শরীরের একটি সতর্কবার্তা হতে পারে।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন