ফিলিপাইনের সাবেক রাষ্ট্রপতি রডরিগো দুয়ার্তে, যিনি বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) হেফাজতে রয়েছেন, তার নিজ শহর দাভাওয়ে মেয়র নির্বাচনে বিশাল জয়লাভ করেছেন। মঙ্গলবার প্রকাশিত সরকারি ফলাফলে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এই জয়ের ফলে দুয়ার্তের পরিবারের রাজনৈতিক প্রভাব আরও একবার স্পষ্ট হয়েছে, যেখানে তার ছেলে এবং নাতি-নাতনিরাও স্থানীয় নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।
**দুয়ার্তের বিজয় এবং পরিবারের প্রভাব**
দাভাও শহরের নির্বাচন বোর্ড ঘোষণা করেছে যে দুয়ার্তে মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
ফলাফলে দেখা যায়, তিনি প্রায় ৬৬০,০০০ ভোট পেয়েছেন, যা তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে আট গুণ বেশি।
ফল ঘোষণার পর তার সমর্থকরা “দুয়ার্তে, দুয়ার্তে” বলে উল্লাস প্রকাশ করে।
দুয়ার্তের কনিষ্ঠ পুত্র, সেবাস্টিয়ান, যিনি বর্তমানে দাভাওয়ের মেয়র ছিলেন, এবার ভাইস মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।
তার জ্যেষ্ঠ পুত্র পাওলো পুনরায় হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
এছাড়াও, তার দুই নাতি স্থানীয় নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন।
এই ঘটনাগুলো দুয়ার্তে পরিবারের রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং প্রভাবের ধারাবাহিকতাকেই তুলে ধরে।
**রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ**
এই নির্বাচনের ফল দুয়ার্তের মেয়ে, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুয়ার্তের জন্য একটি মিশ্র ফল নিয়ে এসেছে।
অন্যদিকে, তিনি জুলাই মাসে সিনেটে অভিশংসন বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন।
তার বিরুদ্ধে সরকারি তহবিল অপব্যবহার এবং প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।
সারা দুয়ার্তে ২০২৮ সালের রাষ্ট্রপতি পদের জন্য একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।
তবে, যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তিনি তার পদ হারাবেন এবং আজীবনের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অযোগ্য হবেন।
মুক্তি পেতে হলে তাকে ২৪ জন সিনেটরের মধ্যে কমপক্ষে ৯ জনের সমর্থন প্রয়োজন।
সিনেট নির্বাচনের ফল এখনো সম্পূর্ণভাবে জানা যায়নি, তবে প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে দুয়ার্তের পরিবারের সমর্থনপুষ্ট অন্তত পাঁচজন প্রার্থী সিনেটের ১২টি আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে আছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই নির্বাচনের ফল সারা দুয়ার্তের জন্য ইতিবাচক হতে পারে, তবে তার অভিশংসন বিচারের ফলাফল এখনো অনিশ্চিত।
এদিকে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের দল থেকে মনোনীত প্রার্থীরাও ভালো ফল করেছেন।
মার্কোস এক বিবৃতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল ফিলিপিনোকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং বলেছেন, “আমাদের গণতন্ত্র নতুন করে জেগে উঠেছে—শান্তিপূর্ণভাবে, সুশৃঙ্খলভাবে এবং সম্মানের সাথে।”
**আইসিসির মামলা এবং রাজনৈতিক টানাপোড়েন**
রডরিগো দুয়ার্তের এই বিজয় এমন এক সময়ে এলো, যখন তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) হেফাজতে রয়েছেন।
ফিলিপাইনের আইন অনুযায়ী, অভিযুক্ত হলেও কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন, যদি না তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং আপিলের সুযোগ শেষ হয়ে যায়।
সারা দুয়ার্তে নির্বাচনের দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তার বাবার হয়ে শপথ নেওয়ার বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
তিনি আরও জানান, সেক্ষেত্রে ভাইস মেয়র সম্ভবত ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করবেন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস