পৃথিবীর এই ‘দ্রুত’ গতি! সময় নিয়ে বিজ্ঞানীদের ঘুম উড়েছে?

ভূ-পৃষ্ঠ দ্রুত ঘুরছে, সময় গণনার ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তনের শঙ্কা

সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি বেড়ে যাওয়ায় দিনগুলো সামান্য ছোট হয়ে আসছে। বিজ্ঞানীদের মধ্যে তাই সময় গণনার পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে, সমন্বিত আন্তর্জাতিক সময় (Coordinated Universal Time – UTC)-এর হিসাবে ‘লিপ সেকেন্ড’ বাদ দেওয়ার মতো নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। এর ফলে কম্পিউটার ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০০০ সালের ‘ওয়াইটুকে’ (Y2K) সমস্যার মতো জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর এই ঘূর্ণন গতির পরিবর্তনের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— চাঁদের আকর্ষণ, বায়ুমণ্ডলের ঋতুভিত্তিক পরিবর্তন, পৃথিবীর অভ্যন্তরের তরল কোর এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বরফ গলা।

সময় মাপার ক্ষেত্রে পারমাণবিক ঘড়ি ব্যবহার করা হয়, যা অত্যন্ত নির্ভুলভাবে সময় নির্ধারণ করতে পারে। এই ঘড়িগুলি সেকেন্ডের ভগ্নাংশ পর্যন্ত সময় পরিমাপ করতে সক্ষম। আন্তর্জাতিক ‘আর্থ রোটেশন অ্যান্ড রেফারেন্স সিস্টেমস সার্ভিস’ (IERS) এই পরিবর্তনের ওপর নজর রাখছে।

তাদের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি বেড়েছে। এমনকি, গত ৫ই জুলাই, ২০২৩ ছিল পারমাণবিক ঘড়ি আবিষ্কারের পর থেকে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত দিন। সেদিনের দৈর্ঘ্য ছিল ২৪ ঘণ্টার চেয়ে ১.৬৬ মিলিসেকেন্ড কম।

সাধারণত, একটি দিনের আদর্শ সময়কাল হলো ২৪ ঘণ্টা বা ৮৬,৪০০ সেকেন্ড। তবে পৃথিবীর ঘূর্ণনে সামান্য তারতম্য ঘটে। এই পরিবর্তনের কারণে, অনেক সময় ২৪ ঘণ্টার চেয়ে সামান্য বেশি বা কম সময় লাগে।

এই সামান্য পার্থক্য অনেক ক্ষেত্রে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনুভূত হয় না। কিন্তু কম্পিউটার, স্যাটেলাইট এবং টেলিযোগাযোগের মতো প্রযুক্তিগুলোর ক্ষেত্রে সময়ের এই সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির এই পরিবর্তন সম্ভবত ২০৩৫ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হবে। যেহেতু পৃথিবীর ঘূর্ণন দ্রুত হচ্ছে, তাই ভবিষ্যতে ‘লিপ সেকেন্ড’ বাদ দিতে হতে পারে।

আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করেছে। এর ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি কিছুটা কমে গেছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বরফ গলা অব্যাহত থাকলে পৃথিবীর ঘূর্ণন আরো প্রভাবিত হবে।

পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির এই পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে সময় গণনার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের এই যুগে, সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব অপরিসীম।

তাই, এই বিষয়ে বিজ্ঞানীদের সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *