ভূমিকম্প: ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়লে কতক্ষণ বাঁচার সম্ভাবনা?

ভূমিকম্পের পরে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়লে কতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ বাঁচতে পারে? সম্প্রতি মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে আঘাত হানা ভূমিকম্পের পর এই প্রশ্নটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উদ্ধারকর্মীরা এখনও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পের পরে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে আটকে পড়া মানুষের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকগুলো বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—আবহাওয়া কেমন, তাদের আঘাত কতটা গুরুতর এবং তারা বাতাস ও পানির মতো প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পাচ্ছে কিনা।

সাধারণত, কোনো ব্যক্তির আঘাত গুরুতর না হলে এবং আবহাওয়া খুব বেশি গরম বা ঠান্ডা না থাকলে, তারা এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরেও বেঁচে থাকতে পারে। তবে, সময় যত বাড়তে থাকে, তাদের বাঁচার সম্ভাবনা তত কমতে থাকে। ভূমিকম্পের প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।

ভূমিকম্পে আটকে পড়া ব্যক্তিদের বাঁচার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় প্রভাব ফেলে। তাদের চারপাশে যদি এমন একটি জায়গা থাকে যেখানে তেমন কোনো ধ্বংসস্তূপ নেই, তাহলে গুরুতর আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এই ধরনের স্থানকে বিশেষজ্ঞরা ‘সারভাইভেবল ভয়েড স্পেস’ (বেঁচে থাকার মতো ফাঁকা জায়গা) বলে থাকেন। এছাড়া, অগ্নিকাণ্ড, ধোঁয়া বা রাসায়নিক গ্যাসের কারণেও মানুষের জীবনহানির ঝুঁকি বাড়ে।

শ্বাস নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত বাতাস এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকাটাও জরুরি। খাবার ছাড়া হয়তো কিছু দিন বাঁচা যেতে পারে, তবে জল ছাড়া বেশি দিন টেকা কঠিন।

আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তাপমাত্রা কেমন, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, মিয়ানমারে বর্তমানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) উপরে, যা উদ্ধারকাজকে কঠিন করে তুলেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় অনেক সময় উদ্ধারকারীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেন না। ভারী যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামের অভাবও উদ্ধারকাজে বাধা সৃষ্টি করে।

আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারের আগে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়াটাও জরুরি। কারণ, পেশি ভেঙে গেলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ তৈরি হতে পারে, যা তাদের শরীরের জন্য মারাত্মক হতে পারে।

ভূমিকম্পের ঘটনা থেকে বাঁচার কিছু উজ্জ্বল দৃষ্টান্তও রয়েছে। ২০১১ সালে জাপানে ভূমিকম্প ও সুনামির পর একটি কিশোর এবং তার ৮০ বছর বয়সী ঠাকুরমাকে তাদের বিধ্বস্ত বাড়ির নিচ থেকে নয় দিন পর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছিল। ২০১০ সালে হাইতিতে ভূমিকম্পের ১৫ দিন পর এক ১৬ বছর বয়সী কিশোরীকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল।

ভূমিকম্পের সময় নিজেকে রক্ষার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলোতে ঘরবাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশেষ নিয়মকানুন মেনে চলা হয়। যদি আপনি কোনো ভবনের ভেতরে থাকেন, তবে দ্রুত কোনো মজবুত টেবিল বা আসবাবপত্রের নিচে আশ্রয় নিন। আপনার মুখ ও মাথা রক্ষার জন্য কাপড় ব্যবহার করতে পারেন।

ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়লে শক্তি সঞ্চয় করা জরুরি। খাবার ও পানি হিসাব করে খান। উদ্ধারকর্মীদের সাহায্যের জন্য শব্দ করার চেষ্টা করুন। আপনার কাছে ফোন থাকলে, ব্যাটারি বাঁচিয়ে মাঝে মাঝে সাহায্য চাওয়ার চেষ্টা করুন।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *