গণতন্ত্রের দুঃসময়: পূর্ব আফ্রিকায় কীভাবে ফিরবে সুদিন?

পূর্ব আফ্রিকার গণতন্ত্রের সঙ্কট: উত্তরণের উপায় কী?

গত কয়েক বছরে পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে গণতন্ত্রের অবক্ষয় একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক নিপীড়ন, বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করা, এবং বিক্ষোভ দমনের ঘটনাগুলো ক্রমশ বাড়ছে। উগান্ডা, তানজানিয়া, কেনিয়া, বুরুন্ডি, রুয়ান্ডা এবং কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের পরিস্থিতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

সম্প্রতি, তানজানিয়ার পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের পর মুক্তি পেয়েছেন উগান্ডার আইনজীবী আঘাথার আতুহাইরে। কেনিয়ায় সরকার বিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন কেনিয়ার মানবাধিকার কর্মী বনিফাস মুয়াঙ্গিও। তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাগুলো পূর্ব আফ্রিকার মানুষের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের ক্রমাবনতির বিষয়টি আবারও সামনে এনেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শুধুমাত্র নির্বাচনের আয়োজন করলেই একটি দেশের গণতন্ত্র সুসংহত হয় না। এর জন্য প্রয়োজন স্থানীয় সরকারগুলোর শক্তিশালী ভূমিকা, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা, এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ। কিন্তু এই বিষয়গুলোর অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে।

ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে নির্বাহী বিভাগের হাতে। আইনসভাগুলোও দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। উদাহরণস্বরূপ, নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়া গণতন্ত্রের দুর্বলতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে নারীদের জন্য সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে, যা তাদের নির্বাচনী কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করছে।

কেনিয়ায়, গত বছর সরকার বিরোধী বিক্ষোভে কমপক্ষে ৮২ জন নিহত হয়। বিক্ষোভের পর প্রতিবাদকারীদের অপহরণ ও গুমের ঘটনাও বেড়েছে। রুয়ান্ডায়, প্রেসিডেন্ট পল কাগামের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাওয়া বিরোধী নেতাদের কারারুদ্ধ করা হয়েছে। কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে রাজনৈতিক অস্থিরতা লেগেই আছে।

তাহলে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কী?

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জনগণের মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়াতে হবে। নাগরিকদের বিদ্যালয়ে, হাসপাতালে, ট্রেড ইউনিয়ন, সমবায় সমিতি এবং খেলাধুলার মতো সামাজিক সংগঠনগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। এর মাধ্যমে তারা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারবে।

একইসঙ্গে, পূর্ব আফ্রিকার আইনপ্রণেতাদের তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। তাদের কাজ কেবল রাজনৈতিক ক্ষমতা ধরে রাখা নয়, বরং জনগণের অধিকার রক্ষা করা, নির্বাহী বিভাগের স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ন্ত্রণ করা এবং সংবিধানের মর্যাদা সমুন্নত রাখা।

নাইজেরিয়ার প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী তাজউদ্দিন আব্দুল-রহিমের ভাষায়, “আক্ষেপ না করে, সংগঠিত হোন।” অর্থাৎ, পূর্ব আফ্রিকার গণতন্ত্রকে তৃণমূল পর্যায় থেকে পুনর্গঠন করতে হবে। জনগণের সক্রিয়তা এবং নেতাদের সদিচ্ছা- এই দুটি বিষয়ের সমন্বয়েই গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার সম্ভব।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *