আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংগঠন (ASEAN)-এ যোগ দিল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র, পূর্ব তিমুর। কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা করা হয়, যা ১৯৯০-এর দশকের পর এই জোটের প্রথম সম্প্রসারণ।
এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে পূর্ব তিমুরের প্রধানমন্ত্রী সানানা গুসমাও একে ‘একটি স্বপ্ন সত্যি হওয়া’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
আসলে, পূর্ব তিমুরের এই অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়াটি ছিল দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময়ের। ১৯৯৯ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চেষ্টা চালিয়েছে।
দেশটির জনসংখ্যা ১৪ লক্ষ এবং জিডিপি প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ASEAN-এর সদস্যপদ লাভের ফলে, ৬ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষের একটি বিশাল বাজার এবং ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে পূর্ব তিমুরের জন্য।
এর মাধ্যমে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা এবং ডিজিটাল অর্থনীতির ক্ষেত্রে দেশটির উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
পূর্ব তিমুরের অন্তর্ভুক্তির ফলে ASEAN-এর সদস্য সংখ্যা বেড়ে এখন ১১টি দেশে দাঁড়িয়েছে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এই প্রসঙ্গে বলেন, “এটি ASEAN পরিবারের পূর্ণতা এনে দিয়েছে, যা আমাদের সকলের একটি সাধারণ গন্তব্য এবং আঞ্চলিক সম্পর্কের গভীরতা আরও দৃঢ় করবে।”
তবে, এই পথটি সহজ ছিল না।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে স্বাধীনতা অর্জনের আগে, পর্তুগিজ এবং ইন্দোনেশিয়ার শাসনের অধীনে দীর্ঘ সময় ধরে নিপীড়িত হয়েছে দেশটি।
বর্তমানে, উচ্চ বেকারত্ব, অপুষ্টি এবং দারিদ্র্যের মতো গুরুতর সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করছে তারা।
দেশটির প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।
তিমুরেরে অর্থনীতি মূলত তেল ও গ্যাসের উপর নির্ভরশীল, তবে তারা এখন এই নির্ভরতা কমিয়ে আনতে চাইছে।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রেও এই সম্মেলন ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত বিরোধ মীমাংসার জন্য একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
এই চুক্তির ফলে সীমান্তে উত্তেজনা কমবে এবং দীর্ঘমেয়াদী শান্তির পথ সুগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ASEAN-এ পূর্ব তিমুরের যোগদান এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা আরও বাড়াবে।
বিশেষ করে, যুব উন্নয়ন, গণতান্ত্রিক শাসন এবং ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোর কূটনীতি বিষয়ক ধারণা বিনিময়ে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই ঘটনা বাংলাদেশের জন্যেও একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে, কারণ আঞ্চলিক সহযোগিতা উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস