পশ্চিমের বাস্তব ‘কাউগার্ল’দের নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ইস্ট অফ ওয়াল’ -এর গল্প।
যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলের রুক্ষ প্রান্তরের প্রেক্ষাপটে নারীদের জীবনসংগ্রাম নিয়ে নির্মিত হয়েছে নতুন চলচ্চিত্র ‘ইস্ট অফ ওয়াল’।
পরিচালক কেট বিকেলফট এই সিনেমায় তুলে ধরেছেন দক্ষিণ ডাকোটার কাউগার্লদের (মহিলা রাখাল) জীবন।
যারা একদিকে যেমন দক্ষ ঘোড়সওয়ার, তেমনই তাঁদের জীবন নানা প্রতিকূলতায় ভরা।
সিনেমাটি একইসঙ্গে বাস্তব এবং কল্পনার মিশেলে তৈরি করা হয়েছে।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন বাস্তব জীবনের কাউগার্ল ও অভিনেত্রী জেনিফার এহলে এবং স্কুট ম্যাকনরি।
গল্পের কেন্দ্রে রয়েছেন টাবাতা জিমিগা নামের এক নারী, যিনি বন্য ঘোড়াদের শান্ত করার অসাধারণ ক্ষমতা রাখেন।
সিনেমায় দেখা যায়, কীভাবে তিনি পশুদের উদ্ধার করেন এবং তাদের সুস্থ করে তোলেন।
এরপর সেই ঘোড়াগুলোকে নিলামে বিক্রি করা হয়, যেখানে অনেক সময় তাদের ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না।
টাকার অভাবে টাবাতাকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
তাঁর নিজের খামারের খরচ চালানো, পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণ করা – এসবের চাপ তো আছেই, সেই সঙ্গে শহরের আরও কিছু আশ্রয়হীন মানুষের দায়িত্বও তাঁকে নিতে হয়।
টাবাতা একসময় পুরনো এবং নতুন, দুই ধরনের মানসিক আঘাতের শিকার হন।
বংশপরম্পরায় চলা আসা নির্যাতনের যন্ত্রণা তো ছিলই, তার ওপর স্বামীর আকস্মিক মৃত্যু যেন সবকিছু এলোমেলো করে দেয়।
এই শোকের প্রভাব পড়ে তাঁর মেয়ে পোরশিয়া জিমিগার ওপর, যে মায়ের প্রতি ঘৃণা অনুভব করতে শুরু করে।
কিশোরী পোরশিয়ার বয়ানে সিনেমার গল্প আরও গভীরতা পায়, যেখানে সে মা, ঘোড়া এবং প্রকৃতির সঙ্গে তার সম্পর্কের কথা তুলে ধরে।
‘ইস্ট অফ ওয়াল’ সিনেমাটি বিশেষভাবে নজর কাড়ে এর দৃশ্যায়নের জন্য।
এখানে দেখা যায়, কীভাবে নারীরা ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছুটে চলেছেন, বন্ধুদের সঙ্গে মিলে টিকটক বানাচ্ছেন।
তাঁদের শরীরী ভাষা, ত্বকের অসম্পূর্ণতা, শরীরে ট্যাটু – সবকিছুই যেন এই চরিত্রগুলোকে আরও জীবন্ত করে তোলে।
সিনেমাটিতে কোনো স্টান্টম্যানের সাহায্য ছাড়াই তাঁরা নিজেদের কাজ করেছেন, যা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
সিনেমার গল্পে আর্থিক অনটন এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যেকার সম্পর্ক গভীর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
তবে, সিনেমার কিছু অংশে গল্প বলার ধরনে দুর্বলতা দেখা যায়।
যেমন, যখন এক সন্দেহজনক টেক্সান এসে খামারটি কিনতে চায়, সেই অংশটি গল্পের স্বাভাবিক গতিকে খানিকটা ব্যাহত করে।
যদিও নির্মাতারা তাঁদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, তবুও এই ধরনের ঘটনাগুলো সিনেমার দুর্বলতা হিসেবে ধরা পড়ে।
পরিচালক কেট বিকেলফট কীভাবে এই গল্প খুঁজে পেলেন, সেই বিষয়েও একটি কৌতূহল রয়েছে।
জানা যায়, তিনি একজন অভিনেত্রী এবং প্রোডাকশন ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতেন।
একদিন বন্ধুদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের গল্প খুঁজে বের করতে বেরিয়ে এক ভুল পথে তাঁর এই নারীদের সঙ্গে পরিচয় হয়।
‘ইস্ট অফ ওয়াল’ একজন নবাগত নির্মাতার জন্য একটি উজ্জ্বল সূচনা এবং এমন একটি জগতের প্রতিচ্ছবি, যা অনেকের কাছেই অজানা।
সিনেমাটি ইতোমধ্যে সানডেন্স চলচ্চিত্র উৎসবে দর্শক পুরস্কার জিতেছে।
বর্তমানে সিনেমাটি প্রেক্ষাগৃহে চলছে।
সিনেমাটির দৈর্ঘ্য ৯৭ মিনিট এবং এটি ‘আর’ রেটিংপ্রাপ্ত।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস