ঘুম ভালো করতে খাদ্যাভ্যাস: আপনার ডায়েটে আনুন পরিবর্তন।
ঘুম আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে পুনরায় সক্রিয় করে তোলে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
ঘুমের অভাব শরীরে নানা রোগের সৃষ্টি করতে পারে। সম্প্রতি, খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ঘুমের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, কিছু খাবার গ্রহণ করে ঘুমের গুণগত মান উন্নত করা যেতে পারে। কিভাবে? আসুন, জেনে নিই বিস্তারিত।
ডা. মারি-পিয়েরে সেন্ট-অঞ্জ, যিনি কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ইরভিং মেডিকেল সেন্টারের সেন্টার অফ এক্সিলেন্স ফর স্লিপ অ্যান্ড সার্কাডিয়ান রিসার্চের পরিচালক, তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন যে নির্দিষ্ট কিছু খাবার ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে।
বিশেষ করে, যে খাবারগুলিতে মেলাটোনিন নামক হরমোন তৈরি হয়, সেগুলো ঘুমের জন্য উপকারী। মেলাটোনিন আমাদের ঘুম এবং জাগরণের চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে।
শরীরে পর্যাপ্ত মেলাটোনিন তৈরি করতে সাহায্য করে এমন একটি উপাদান হলো ট্রিপটোফ্যান।
তাহলে ঘুমের জন্য কি শুধু ট্রিপটোফ্যান সমৃদ্ধ খাবার খেলেই হবে? না, ডা. এরিকা জ্যানসেন, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ পাবলিক হেলথের নিউট্রিশনাল সায়েন্সেস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, এই বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন।
তাঁর মতে, একটি নির্দিষ্ট খাবারের উপর নির্ভর না করে, বরং সারা দিনের খাদ্য তালিকায় কিছু পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘুমের জন্য একটি সুষম খাদ্য খুবই জরুরি। খাদ্য তালিকায় ফল ও সবজির পাশাপাশি শস্য, ফাইবার এবং কম স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত প্রোটিনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
ছোলা, মসুর ডাল, টোফু, বাদাম, বীজ এবং শিমের মতো খাবার ট্রিপটোফ্যানের ভালো উৎস। কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের ক্ষেত্রে, প্রক্রিয়াজাত খাবার ত্যাগ করে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত।
ডা. সেন্ট-অঞ্জের মতে, ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস ঘুমের জন্য উপকারী হতে পারে। এই খাদ্যাভ্যাসে মাছ ও জলপাই তেল থেকে ভালো ফ্যাট পাওয়া যায়, যা ঘুমের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, কিছু ভিটামিন ও মিনারেল ঘুমের জন্য সহায়ক। যেমন –
- জিঙ্ক (Zinc): কাঠবাদাম, ঝিনুক ও গমের তুষে পাওয়া যায়।
- ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium): চিয়া বীজ, কাজুবাদাম ও দইয়ে বিদ্যমান.
- ভিটামিন বি (Vitamin B): কলা, ছোলা ও টুনা মাছে পাওয়া যায়.
- ফোলেট (Folate): ব্রোকলি, মসুর ডাল ও পালং শাকে থাকে।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ঘুমের জন্য কি সাপ্লিমেন্ট নেওয়া যেতে পারে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাপ্লিমেন্টের পরিবর্তে খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করা ভালো।
কারণ, খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণ করা শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং নিরাপদ।
তাহলে, ঘুমের জন্য খাদ্য তালিকায় কি পরিবর্তন আনবেন? ডায়েটিশিয়ান অ্যালেক্সান্দ্রা বাবককের পরামর্শ হলো, একটি বা দুটি খাবারের মাধ্যমে পরিবর্তন শুরু করা যেতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, সকালের খাবারে ফল, সবজি বা শস্য যোগ করতে পারেন। দুপুরের খাবারে ছোলা যুক্ত সালাদ একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। এছাড়া, খাবারে স্বাদ যোগ করার জন্য মশলার ব্যবহার করতে পারেন।
ঘুমের সমস্যা সমাধানে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। ঘুমের সমস্যা গুরুতর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন