শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের সুযোগ সীমিত করার অভিযোগে, ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)-এর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি, তিনটি ভিন্ন দল – শারীরিক প্রতিবন্ধী (পিডি), শিক্ষাগত প্রতিবন্ধী (এলডি) এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধী (ডেফ) – এদের একত্রিত করে একটি মিশ্র-প্রতিবন্ধী দল গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয় ইসিবি।
এই পদক্ষেপের ফলে অনেক খেলোয়াড় ইতিমধ্যেই প্রতিবাদস্বরূপ দল ত্যাগ করেছেন। খেলোয়াড় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আশঙ্কা, এই পরিবর্তনের ফলে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের খেলার সুযোগ কমে যাবে এবং তুলনামূলকভাবে কম প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের প্রাধান্য দেওয়া হবে।
আগামী জুন ও জুলাই মাসে ইংল্যান্ডে ভারতের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রথম ‘প্যান-ডিজএবিলিটি’ আন্তর্জাতিক সিরিজ-এর আগে এমন অভিযোগ উঠেছে। এই সিরিজটি মূলত, ঘরোয়া ‘ডিসএবিলিটি প্রিমিয়ার লীগ’ (ডিপিএল)-এর আদলে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে তিনটি ভিন্ন দলের খেলোয়াড়েরা একসঙ্গে খেলবেন।
ইংল্যান্ড দলের প্রাক্তন উইকেটরক্ষক এবং পিডি দলের সদস্য লিয়াম থমাস এই পরিবর্তনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “বিষয়টি ভালো সুযোগ তৈরি করতে পারে, তাত্ত্বিকভাবে সবকিছু ঠিকঠাক মনে হলেও, গভীরে গেলে অনেক সমস্যা দেখা যায়।
খেলোয়াড়দের মধ্যে যোগাযোগের সমস্যা, প্রতিটি প্রতিবন্ধকতার ওপর এর প্রভাব, সুযোগ কমে যাওয়া—এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেফ (Deaf) দলের খেলোয়াড়দের জন্য যোগাযোগ একটি বড় সমস্যা। যদিও ইসিবি (ECB) দলগুলির জন্য সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে, কিন্তু একজন ডেফ ক্রিকেটারের মতে, এর প্রভাব সামান্যই হবে।
তাদের মতে, “ব্রিটিশ সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ (বিএসএল)-এর মতো একটি সমৃদ্ধ ভাষাকে যেনতেন প্রকারে সারার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফ্রেন্স খেলোয়াড় দলে যোগ দিলে, আমরা সবাই ‘বোঁজুর’ বলতে শিখে গেলেই তো হল না।
ডিপিএলের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দল এক ধরনের প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের নিয়ে গঠিত হতে পারবে না। কিন্তু জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত একটি সূত্র ‘দি গার্ডিয়ান’-কে জানিয়েছে, আসন্ন ভারত সিরিজে ডেফ এবং লার্নিং ডিসএবিলিটি (এলডি) দলের খেলোয়াড়দের কম সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বোর্নমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্টারবুরি ক্রাইস্ট চার্চ বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিউজিল্যান্ডের ওয়াইকাটো বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে, ডিপিএল-এর এই কাঠামো প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করছে।
গবেষকরা ইসিবির এই পরিকল্পনার সমালোচনা করে বলেছেন, দলগুলোকে একত্রিত করার ফলে কিছু খেলোয়াড় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বাদ পড়বেন।
ইসিবি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা প্রতিবন্ধী ক্রিকেটকে আরও বেশি দেশের কাছে জনপ্রিয় করতে চায় এবং এর মাধ্যমে একটি ‘ডিসএবিলিটি বিশ্বকাপ’-এর আয়োজন করতে চাইছে।
তবে খেলোয়াড়রা এই যুক্তির সঙ্গে সহমত নন, কারণ বর্তমানে অন্য কোনো দেশ ‘প্যান-ডিজএবিলিটি’ ক্রিকেট খেলে না। একজন ডেফ খেলোয়াড় একে ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ইসিবি’র একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা সকল প্রতিবন্ধী দলের খেলোয়াড়দের জন্য ১৭ ঘণ্টার অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। তাদের মতে, ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবন্ধী দলের খেলোয়াড়দের একত্রিত করা খুবই উৎসাহজনক, তবে এতে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান