এককালের শান্ত দেশ ইকুয়েডর, মাদক ব্যবসার ভয়ংকর জালে জর্জরিত: উদ্বেগে বিশ্ব।
একটি সময় ছিল যখন ইকুয়েডরকে একটি শান্ত ও সুন্দর দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু সময়ের পালাবদলে, দেশটি এখন মাদক ব্যবসার ভয়ংকর চক্রে আটকা পড়েছে।
সেখানকার গ্যাংগুলো (দল) এখন এতটাই শক্তিশালী যে তারা দেশের সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এই পরিস্থিতি কিভাবে তৈরি হলো, তা নিয়ে সম্প্রতি একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিএনএন।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কিভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত গ্যাংগুলো সেখানকার যুবকদের আকৃষ্ট করছে। অভাব ও অনিশ্চয়তার সুযোগ নিয়ে, গ্যাংগুলো তরুণদের হাতে তুলে দিচ্ছে মাদক ব্যবসার পথ।
তাদের প্রলোভন এতটাই শক্তিশালী যে, অনেক যুবক অল্প বয়সেই এই ভয়ংকর জগতে প্রবেশ করছে। সিএনএন-এর অনুসন্ধানে জানা গেছে, একজন গ্যাং সদস্য মাত্র ১৮ বছর বয়সে এই দলে যোগ দিয়েছিল।
এখন তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে, কিন্তু সে এখনো এই ব্যবসা ছাড়তে রাজি নয়। তার মতে, এখানে ভালো ব্যবসা হয়, তাই সহজে এই পথ থেকে সরে আসা সম্ভব নয়।
ইকুয়েডরের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদক ব্যবসার বিস্তার ঘটেছে। কোকেন পাচারের জন্য কলম্বিয়া থেকে আসা মাদক প্রায়ই দেশটির উপকূলীয় এলাকা এসмераলদাসে প্রবেশ করে।
এরপর তা বিভিন্ন পথে ছড়িয়ে পরে। দেশটির একটি প্রধান রপ্তানি কেন্দ্র হলো লস রিওস, যেখানে কলা বাগানে লুকিয়ে মাদক পাচার করা হয়। এমনকি পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থান গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জও মাদক পাচারের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
সিএনএন-এর অনুসন্ধানী দলের সদস্যরা ইকুয়েডরের সামরিক বাহিনীর সঙ্গেও কথা বলেছেন। তারা দেখেছেন, মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশটির সামরিক বাহিনী অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করছে।
তাদের পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব রয়েছে। সামরিক কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, এই সংকট মোকাবিলায় তাদের বাইরের সাহায্য প্রয়োজন।
এই পরিস্থিতিতে সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। একদিকে যেমন জীবন ধারণের জন্য সংগ্রাম, তেমনই অন্যদিকে গ্যাংগুলোর ভয়ে তাদের দিন কাটে।
অনেকে তাদের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতেও তারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করার চেষ্টা করে।
এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি মাদক ব্যবসার আন্তর্জাতিক রূপ এবং এর ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা দেয়। একইসঙ্গে, এটি ইকুয়েডরের জনগণের দুর্ভোগ ও তাদের টিকে থাকার লড়াইয়ের চিত্র তুলে ধরেছে।
মাদক ব্যবসার কারণে সৃষ্ট এই সংকট শুধু ইকুয়েডরের একার নয়, এর সঙ্গে বিভিন্ন দেশ জড়িত। তাই, পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা খুবই জরুরি।
ভবিষ্যতে, এই সংকট কিভাবে সমাধান করা যায়, সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন