ইকুয়েডরে নির্বাচনে ‘মাদক যুদ্ধ’র ভবিষ্যৎ: টানটান উত্তেজনায়!

ইকুয়েডরের আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধের’ ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হতে চলেছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া এবং বামপন্থী প্রার্থী লুইসা গঞ্জালেজের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে, যা দেশটির নীতি নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় আনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত প্রথম রাউন্ডের নির্বাচনে সামান্য ভোটের ব্যবধানে (মাত্র ০.১৭%) এগিয়ে ছিলেন নোবোয়া। তবে জনমত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, উভয় প্রার্থীর মধ্যে এখন তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে। এর আগে, ২০২৩ সালের নির্বাচনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গুইলার্মো লাসোকে অভিশংসন থেকে বাঁচাতে কংগ্রেস ভেঙে দেওয়ায় দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করা হয়।

ক্ষমতায় আসার পর, প্রেসিডেন্ট নোবোয়া মাদক পাচার চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে ‘অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘাত’ ঘোষণা করেন এবং সশস্ত্র বাহিনীকে সক্রিয় করেন। যদিও প্রথমে অপরাধের সংখ্যা কিছুটা কমেছিল, তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বাড়তে থাকে। এমনকি, লাতিন আমেরিকায় এখনো ইকুয়েডরের সর্বোচ্চ খুন হওয়ার হার বিদ্যমান।

গুয়াকিলের একটি দরিদ্র এলাকা, সোসিও ভিভিয়েন্ডা II-তে সম্প্রতি গ্যাংগুলির মধ্যে সংঘর্ষে ২২ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে, যা দেশটির ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মারিয়া জানিয়েছেন, “পরিস্থিতি এখন আরও খারাপ।” তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্র আমাদের ত্যাগ করেছে, আইনের শাসন এখানে নেই।”

অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট নোবোয়ার জনপ্রিয়তা হ্রাসের পেছনে রয়েছে একটি গভীর অর্থনৈতিক সংকট। জ্বালানি ঘাটতির কারণে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্ল্যাকআউট হচ্ছে, যা জনগণের জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। জিডিপি ১.৫% হ্রাস পেয়েছে এবং দারিদ্র্যের হার ২৬% থেকে বেড়ে ২৮%-এ দাঁড়িয়েছে।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গবেষণা কেন্দ্র (CEPR) এর করা এক জরিপে দেখা গেছে, ৬১% উত্তরদাতার মতে, প্রেসিডেন্ট নোবোয়ার আমলে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাতিয়াস আবাদ মার্চান বলেন, “নোবোয়া অল্প সময়ের জন্য ক্ষমতায় থাকলেও, ভোটারদের মধ্যে তার কর্তৃত্বপরায়ণ আচরণের প্রতি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে।”

নির্বাচনী প্রচারণার সময় সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে, কারণ প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করতে রাজি হননি। এছাড়া, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ গ্লাসের আটকের জন্য মেক্সিকান দূতাবাসে পুলিশ ও সামরিক বাহিনী পাঠানোর ঘটনায় কূটনৈতিক সংকট তৈরি হয়। গ্লাস বর্তমানে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত।

নোবোয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন লাভের চেষ্টা করছেন এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ছবিও তুলেছেন। তবে বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়ছে না। অপরাধ দমনের উদ্দেশ্যে তিনি বিতর্কিত সামরিক ঠিকাদার এরিক প্রিন্সের সঙ্গে জোট করেছেন। এমনকি, একটি কোম্পানির মাধ্যমে ইউরোপে পাঠানো কলার কনটেইনারে কোকেন পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে, যেখানে নোবোয়া ও তাঁর ভাইয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ার রয়েছে।

নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন নোবোয়া। তবে পর্যবেক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফল ঘোষণার পর তিনি তা মেনে নেবেন কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ জন ডেমোক্রেট সদস্য দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখে নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *