বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে আদিবাসী জনজীবনে, নিজেদের ঐতিহ্য আর পরিচিতি বাঁচিয়ে রাখার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হল নিজেদের সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরা। আর্জেন্টিনীয় আলোকচিত্রী ইরিনা ওয়ার্নিং-এর ‘লাস পেলিগারাস’ (লম্বা চুলের অধিকারিণী) নামের আলোকচিত্র প্রকল্পটি তেমনই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বিগত দুই দশক ধরে তিনি ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়েছেন, যেখানে নারীদের (এবং পরবর্তীতে পুরুষদেরও) লম্বা চুলের ছবি তুলেছেন তিনি।
এই প্রকল্পের সর্বশেষ অধ্যায় ‘লা রেসিস্টেন্সিয়া’ (প্রতিরোধ)-এ ওয়ার্নিং ইকুয়েডরের ওটাভালো অঞ্চলের কিচুয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের ছবি তুলেছেন। কিচুয়া সম্প্রদায়ের পুরুষদের লম্বা বেণী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যা তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক।
একসময় স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময় তাদের জোর করে চুল কেটে দেওয়া হতো, যা ছিল তাদের সংস্কৃতি ধ্বংস করার একটি চেষ্টা। সেই শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের চিহ্ন হিসেবে তারা আবার তাদের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে এনেছেন।
ওয়ার্নিং-এর মতে, লম্বা চুল কেবল সৌন্দর্য্য নয়, বরং তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলে আসা সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিশ্বাস করে, চুল কাটা মানে জীবনকে খর্ব করা, যা তাদের চিন্তা, আত্মা এবং প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগের প্রতীক।
আদিবাসী কিচুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন, তাদের পোশাক, সঙ্গীত এবং চুলের মাধ্যমে তাদের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। ওয়ার্নিং-এর তোলা ছবিতে দেখা যায়, এক পরিবারের পুরুষেরা তাদের সন্তানদের বেণী বাঁধছেন, যা তাদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এই সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ওয়ার্নিং-এর এই কাজটি প্রমাণ করে, কীভাবে ছবি একটি শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে, যা সংস্কৃতির গভীরতা এবং মানুষের আত্মপরিচয়ের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলে।
‘লাস পেলিগারাস’ প্রকল্পটি বর্তমানে একটি বই আকারে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন