ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন ড্যানিয়েল নোবোয়া। স্বল্প সময়ের জন্য আইনপ্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পর, ২০২৩ সালের একটি দ্রুত নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন এবং মাত্র ১৬ মাসের জন্য প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে আরও চার বছরের জন্য এই পদে আসীন হলেন।
নোবোয়ার বয়স বর্তমানে ৩৭ বছর এবং তিনি কলা ব্যবসার মাধ্যমে গড়ে ওঠা পরিবারের উত্তরাধিকারী।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর তিনি তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “যারা এই তরুণ প্রেসিডেন্টের উপর আস্থা রেখেছিলেন, তাদের সকলকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। ইকুয়েডর একটি ভিন্ন পথে হাঁটতে চায়, উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে চায়।”
২০২১ সালে জাতীয় পরিষদে নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে নোবোয়ার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়।
এরপর তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি বামপন্থী আইনজীবী লুইসা গঞ্জালেজকে পরাজিত করেন। এই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গুইলার্মো ল্যাসো জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ায়।
রবিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও তিনি গঞ্জালেজকে পরাজিত করেন।
ইকুয়েডরের নির্বাচন পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, ৯২ শতাংশ ভোট গণনার পর নোবোয়া প্রায় ৫৫.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন, যেখানে গঞ্জালেজ পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ ভোট।
তবে গঞ্জালেজ নির্বাচনের ফলকে ‘ভয়ঙ্কর’ আখ্যা দিয়ে পুনরায় ভোট গণনার দাবি জানিয়েছেন।
নোবোয়ার শাসনামলে, অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এর ফলস্বরূপ, ২০২৩ সালে প্রতি ১ লাখে ৪৬.১৮ জন খুন হতো, যেখানে বর্তমানে (২০২৪) সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮.৭৬ জনে। যদিও এই সংখ্যা আগের তুলনায় কম, তবুও ২০১৯ সালের তুলনায় যা অনেক বেশি।
২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রতি ১ লাখে ৬.৮৫ জন।
নোবোয়ার প্রথম মেয়াদে, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এর একটি প্রভাব নির্বাচনে দেখা গেছে।
কারণ, অনেক ইকুয়েডরবাসীর আত্মীয়-স্বজন অভিবাসী হিসেবে আমেরিকায় বসবাস করেন এবং তারা গঞ্জালেজের মতো বামপন্থী নেতার ক্ষমতা গ্রহণের ফলে অভিবাসন নীতিতে পরিবর্তনের আশঙ্কা করেছিলেন।
তবে, নোবোয়ার অপরাধ দমনের কৌশল নিয়ে দেশের ভেতরে এবং বাইরে অনেক সমালোচনা হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি দেশে ‘অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘাতের’ ঘোষণা করেন, যার ফলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে কারাগারে মোতায়েন করা হয়।
এছাড়াও, গত বছর মেক্সিকোর দূতাবাসে অভিযান চালিয়ে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জর্জ গ্লাসকে গ্রেপ্তার করার অনুমতি দেন তিনি।
গ্লাস একজন পলাতক আসামি ছিলেন এবং সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
নির্বাচনের আগে, অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, নোবোয়া সম্ভবত তার ক্ষমতা ধরে রাখতে সংবিধান ও আইনকে ব্যবহার করতে পারেন।
ক্ষমতা গ্রহণের পর, ভাইস প্রেসিডেন্ট ভেরোনিকা আবাদকে ইসরায়েলে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়ে কার্যত তার থেকে দূরে সরিয়ে দেন, যা অনেকের মতে একটি ‘জোরপূর্বক নির্বাসন’।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস