ইকুয়েডরের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন তীব্র অস্থিরতা। দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ভেরোনিকা আবাদ সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়ার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তাঁর অভিযোগ, নির্বাচনে জেতার জন্য নোবোয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করেছেন।
খবর অনুযায়ী, গত নির্বাচনে নোবোয়া তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী লুইসা গঞ্জালেজকে পরাজিত করেন।
জানা গেছে, এক সময়ের সহযোগী হলেও, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই আবাদকে এক প্রকার কোণঠাসা করে রেখেছেন প্রেসিডেন্ট নোবোয়া। এমনকি তাঁকে বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনেও পাঠানো হয়েছে, যা অনেকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন।
আবাদ জানিয়েছেন, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সময় তাঁকে সেখানে শান্তির দূত হিসেবে পাঠানো হয়েছিল, যদিও তিনি এর কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাননি। এরপর তাঁকে তুরস্কের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স হিসেবেও নিয়োগ করা হয়।
আবাদের ধারণা, মূলত আসন্ন নির্বাচনে তাঁর ক্ষমতা যাতে খর্ব করা যায়, সে জন্যই এমনটা করা হয়েছে।
যদিও আবাদ নির্বাচনের ফলাফলের বৈধতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তোলেননি, তবে তাঁর মতে, প্রেসিডেন্ট পদে থেকে নির্বাচন করায় নোবোয়া একটি অন্যায় সুবিধা পেয়েছেন। উল্লেখ্য, নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে নোবোয়া সামান্য ব্যবধানে গঞ্জালেজের থেকে এগিয়ে ছিলেন।
কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফলে প্রায় ১২ লাখ ভোটের ব্যবধানে তিনি জয়লাভ করেন। এই বিশাল ব্যবধান অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নোবোয়ার এই জয়ের পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। তাঁদের মতে, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রাফায়েল কোরেয়ার ১০ বছরের শাসনামলে ব্যাপক দুর্নীতি এবং স্বৈরাচারী শাসনের অভিযোগ ছিল, যা জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করেছে।
তাছাড়া, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইকুয়েডরে অপরাধের হার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা সংকট তৈরি করেছে। নোবোয়ার ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধ’ ঘোষণার পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
নির্বাচনের আগে বিভিন্ন গোষ্ঠীর জন্য প্রায় ৫৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামাজিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল, যা ভোটারদের প্রভাবিত করেছে বলে মনে করা হয়। এই প্যাকেজের মধ্যে পুলিশ, সামরিক বাহিনী, কৃষক এবং তরুণদের জন্য প্রণোদনা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক লুইস সি. কোরডোভার মতে, নোবোয়ার এই ধরনের ‘ক্লায়েন্টেলিস্ট’ নীতি ভোট বাড়াতে সহায়ক হয়েছে। একইসাথে, নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ না করাটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল।
অন্যদিকে, আবাদ মনে করেন, তিনি এখনো নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। তিনি চান, প্রেসিডেন্ট যেন তাঁর প্রতিশ্রুতিগুলো রক্ষা করেন। কারণ, ইকুয়েডর এখনো উচ্চমাত্রার নিরাপত্তাহীনতা, দুর্বল অর্থনীতি এবং ব্যাপক দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছে।
উল্লেখ্য, মার্চ মাসে একটি নির্বাচনী আদালত আবাদের রাজনৈতিক অধিকার স্থগিত করে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি প্রেসিডেন্ট নোবোয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েলা সোমারফেল্ডের বিরুদ্ধে ‘নারী-কেন্দ্রিক রাজনৈতিক সহিংসতার’ অভিযোগ এনেছিলেন।
তবে, আবাদের অভিযোগের কোনো সুরাহা হয়নি। প্রেসিডেন্ট নোবোয়া অবশ্য আবাদকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আগামী ২৪শে মে থেকে নোবোয়া নতুন মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন, যেখানে মারিয়া হোসে পিন্টোকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখা যাবে।
আবাদ জানিয়েছেন, তিনি তাঁর অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন, যা ভবিষ্যতে এই পদে থাকা নারীদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান