মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগে কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার রক্ষায় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনুরূপ চ্যালেঞ্জের সম্ভবনা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ‘অফিস ফর সিভিল রাইটস’ (ওসিআর)-এ কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার রক্ষার বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়েছে। জানা গেছে, এই বিভাগের কর্মীরা মূলত শিশুদের প্রতি হওয়া বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগগুলো তদন্ত করে থাকেন। অভিযোগ পেলে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা এবং তাদের নীতি পর্যালোচনা করার মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা যাচাই করা হয়।
অধিকারকর্মীরা বলছেন, কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি এখন বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ, অভিযোগের পাহাড় জমে যাওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়েছে, যা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময় লাগবে। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য এটি উদ্বেগের কারণ। কারণ, অনেক পরিবারই তাদের সন্তানের অধিকার রক্ষার জন্য আইনজীবী নিয়োগের সামর্থ্য রাখে না। ফলে, সরকারি সহায়তা তাদের জন্য খুবই জরুরি।
ওসিআর-এর মাধ্যমে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়াটি অপেক্ষাকৃত সহজ ছিল এবং এতে আইনজীবীর প্রয়োজন হতো না। কিন্তু কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে সেই সুযোগও সীমিত হয়ে আসছে। কর্মীদের নতুন করে অন্য বিভাগে পদায়ন এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু বিশেষ অভিযোগের (যেমন: ইহুদি বিদ্বেষ) নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে, প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার বিষয়ক অভিযোগগুলো গুরুত্ব হারাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে একটি ফেডারেল মামলা হয়েছে, যেখানে কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে অভিযোগগুলো সঠিকভাবে তদন্ত ও প্রক্রিয়াকরণ করা সম্ভব হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার বাদী এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার বিষয়ক কর্মী নিকি কার্টার বলেন, “এই পরিস্থিতিতে পরিবারগুলো অসহায় বোধ করবে। কারণ, ঘটনার দ্রুত সমাধানে তারা হতাশ হতে পারে।”
অন্যদিকে, শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে নাগরিক অধিকার বিষয়ক তদন্তে কোনো প্রভাব পড়বে না এবং এটি ছিল একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত।
যুক্তরাষ্ট্রে, বিশেষ করে আলাবামায়, কার্টার উল্লেখ করেছেন যে, প্রতিবন্ধী শিশুদের পরিবারগুলোকে আইনি সহায়তা পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। আইনজীবীর উচ্চ ফি দেওয়ার মতো সামর্থ্য তাদের থাকে না।
যদি ওসিআর-এর মামলার জট বাড়ে, তবে পরিবারগুলো দ্রুত অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে আস্থা হারাতে পারে। ফলে, তারা রাজ্য বা স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোগ জানাতে উৎসাহিত হবে। কিন্তু অনেক সময় এসব সংস্থার পর্যাপ্ত জনবল, অবকাঠামো বা অভিজ্ঞতা থাকে না, যা তাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, আর তা হলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট। বাংলাদেশেও প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার সুরক্ষায় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে। তবে, উন্নত বিশ্বের তুলনায় এখানে আইনি সহায়তা এবং অধিকার বিষয়ক সচেতনতার অভাব রয়েছে। দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারের শিশুদের জন্য বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাওয়ার সুযোগ সীমিত।
এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা হতে পারে। কারণ, আমাদের দেশেও প্রতিবন্ধী শিশুদের অধিকার সুরক্ষায় সরকারি দপ্তরগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো এবং আইনি সহায়তার সুযোগ তৈরি করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস