রেকর্ড দামে ডিম! ট্রাম্পের ভবিষ্যদ্বাণী ও বার্ড ফ্লুর পরেও কেন?

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের বাজারে আবারও ঊর্ধ্বগতি, রেকর্ড দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ডিম।

যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দাম নতুন করে বেড়েছে, যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬.২৩ ডলারে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭০০ টাকার সমান (১ ডলার = ১১৩ টাকা, ১৩ মে, ২০২৪)।

বাজারে ডিমের এই দাম বৃদ্ধি ঘটেছে এমন এক সময়ে, যখন দেশটির কৃষি বিশেষজ্ঞরা দাম কমার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। এমনকি পাইকারি বাজারেও ডিমের দাম কিছুটা কমেছিল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন, মার্চ মাসে পাইকারি বাজারে দাম কমার কারণে খুচরা বাজারেও ডিমের দাম কমবে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা ঘটেনি। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাইকারি বাজারে দাম কমা শুরু হওয়ায় খুচরা বাজারে গড় দাম কমার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়নি।

এছাড়া, অনেক দোকানে তাৎক্ষণিকভাবে দাম কমানোর পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি।

ডিমের দাম বাড়ার পেছনে বার্ড ফ্লু বা পাখি-জ্বরকে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। গত জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী মাসে বার্ড ফ্লু ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক হারে মুরগি নিধন করা হয়।

এর ফলে ডিমের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, বার্ড ফ্লু’র কারণে প্রায় ৩ কোটির বেশি ডিম উৎপাদনকারী মুরগি মেরে ফেলতে বাধ্য হয়েছিল কর্তৃপক্ষ।

যদিও মার্চ মাসে এই সংখ্যা কমে ২.১ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে।

বার্ড ফ্লু’র প্রাদুর্ভাবের কারণে খামারগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তারা খুব দ্রুত উৎপাদন শুরু করতে পারেনি।

কারণ, ডিম উৎপাদনকারী মুরগি তৈরি হতে প্রায় ৬ মাস সময় লাগে। এছাড়াও, বার্ড ফ্লু’র কারণে খামারগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নতুন করে মুরগি পালন করতেও সময় লেগেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডিমের পাইকারি দাম কমার পেছনে কৃতিত্ব দাবি করেছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বার্ড ফ্লু মোকাবিলায় খামারিদের সুরক্ষার ওপর জোর দেওয়া হলে তা দীর্ঘমেয়াদে উপকার বয়ে আনবে।

বার্ড ফ্লু’র বর্তমান প্রাদুর্ভাবে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৬ কোটি ৮০ লাখের বেশি পাখি নিধন করা হয়েছে। বন্য পাখির মাধ্যমে এই রোগ দ্রুত ছড়ায়, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

বার্ড ফ্লু শুধু পাখি নয়, দুগ্ধজাত গাভীর মধ্যেও ছড়িয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারিতে ডিমের দাম ছিল ৪.৮২ ডলার। এরপর ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে ৫.৯০ ডলারে পৌঁছেছিল।

কোনো কোনো রাজ্যে, যেমন ক্যালিফোর্নিয়ায়, প্রতি ডজন ডিমের দাম ১২ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল।

সাধারণত, বার্ড ফ্লু’র প্রাদুর্ভাবের আগে, ২০২৩ সালের আগস্টে ডিমের দাম ছিল ২.০৪ ডলার। এরপর থেকে দাম ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকে।

ডিমের দাম বৃদ্ধির এই প্রেক্ষাপটে, খাদ্য নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়গুলো নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বাংলাদেশের বাজারে ডিমের দাম স্থিতিশীল রাখতে এবং বিশ্ব বাজারের অস্থিরতা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে, সরকারের পক্ষ থেকে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *