ঈদ-উল-আজহা: আত্ম-অনুসন্ধান ও মানসিক স্বাস্থ্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান উৎসব ঈদ-উল-আজহা। এই দিনে ত্যাগের মহিমা ও আত্ম-উৎসর্গের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর প্রিয় পুত্রকে উৎসর্গ করতে উদ্যত হয়েছিলেন। এই ঘটনার স্মরণে মুসলিমরা পশু কোরবানি করেন এবং সেই মাংস গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিতরণ করেন। এই ত্যাগের উৎসব শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি আত্ম-অনুসন্ধান এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয় জীবনের গভীর কিছু বিষয়। ঈদ-উল-আজহার আনন্দ ভাগাভাগি করার মাধ্যমে আমরা উদারতা ও সহানুভূতির চর্চা করি।
আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটানো, তাদের প্রতি শুভেচ্ছা জানানো, এবং অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়ানো—এগুলো সবই মানসিক শান্তির জন্য অপরিহার্য।
এই উৎসবের মূল বার্তা হলো—ত্যাগ, ধৈর্য ও ভালো কাজের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনের প্রতিকূলতা মোকাবেলা করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ড. ইয়াসমিন সাদ বলেন, ঈদ-উল-আজহা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। এই উৎসবে আমরা বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে মিলিত হই, দান করি, যা নিয়মিতভাবে করলে আমাদের মন ভালো থাকে।
এই উৎসব থেকে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখতে পারি, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজে লাগে।
- আশা ও ইতিবাচকতা: হজরত ইব্রাহিমের (আ.) ঘটনা আমাদের কঠিন পরিস্থিতিতেও আশা রাখতে শেখায়। যেকোনো প্রতিকূলতা মোকাবেলা করার মানসিকতা তৈরি হয়, যা মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।
- প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা: ইব্রাহিমের (আ.) স্ত্রী হাজেরা (আ.)-এর ঘটনা থেকে আমরা শিখি, আমাদের দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে এবং ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
- অন্যের প্রতি ত্যাগ ও সহযোগিতা: কোরবানির মাধ্যমে আমরা সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের প্রতি সহানুভূতি দেখাই। তাদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে আমরা আত্মতৃপ্তি লাভ করি।
- সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন: ঈদ-উল-আজহার সময় আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মিলিত হওয়া সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করে। মানুষের সঙ্গে মিশে, তাদের দুঃখ-কষ্টে পাশে থেকে আমরা মানসিক শান্তি পাই।
আপনি হয়তো হজের মতো বড় কোনো অনুষ্ঠানে যেতে পারবেন না, তবে নিজের জন্য কিছু সময় বের করতে পারেন। বই পড়া, পছন্দের কাজ করা, অথবা প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া—এগুলো আপনাকে মানসিক শান্তি দিতে পারে।
ঈদের এই আনন্দময় দিনে, আসুন আমরা সবাই মিলেমিশে ভালো কাজ করি এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিই।
তথ্য সূত্র: সিএনএন