আতঙ্কে এল সালভাদর! বুকেলে সরকারের সমালোচক আইনজীবী গ্রেপ্তার!

এল সালভাদরে প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলের সমালোচক মানবাধিকার আইনজীবী রুথ ইলিওনোরা লোপেজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেশটির কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।

তাদের মতে, এটি “কর্তৃত্ববাদের” ক্রমবর্ধমান প্রবণতারই বহিঃপ্রকাশ।

এল সালভাদরের অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় জানিয়েছে, লোপেজ মানবাধিকার সংস্থা ক্রিস্টোসালের দুর্নীতি ও বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি “রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ চুরির” সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, লোপেজের “সক্রিয় অংশগ্রহণের” প্রমাণ মিলেছে। তবে, বিস্তারিত তথ্যের জন্য সিএনএন-এর পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

লোপেজের মা এবং স্বামী এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, তাদের মেয়েকে গ্রেফতারের ঘটনাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ক্রিস্টোসালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওই সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা অভিযোগ করেন, লোপেজকে তার বাড়ি থেকে “মিথ্যা অজুহাত”-এর মাধ্যমে ডেকে আনা হয়।

তাদের দাবি, প্রথমে জানানো হয় যে একটি ট্রাফিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপর তাকে আটক করা হয় এবং কোনো ওয়ারেন্টও দেখানো হয়নি। লোপেজের পরিবারের সদস্যরা আরও জানান, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে সামাজিক মাধ্যমে যে অভিযোগ পোস্ট করা হয়েছে, তা ছাড়া তারা আর কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ সম্পর্কে অবগত নন।

ক্রিস্টোসালের কৌশলগত মামলার পরিচালক আব্রাহাম অ্যাব্রেগো বলেন, “সরকার যে দমন-পীড়ন চালাতে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে প্রস্তুত, এই গ্রেফতার সে কথাই প্রমাণ করে। তারা কার্যত এখন আর কিছুই লুকাচ্ছে না, বরং স্বীকার করছে।” ক্রিস্টোসাল এই ঘটনাকে “স্বল্পকালীন গুম” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

কারণ, লোপেজকে কোথায় রাখা হয়েছে, সে সম্পর্কে তারা কিছু জানে না। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে লোপেজের আইনজীবীকে তার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে।

লোপেজ বুকেলে সরকারের স্বচ্ছতার অভাবের তীব্র সমালোচনা করে আসছিলেন। বিশেষ করে, জরুরি অবস্থার সময় রাষ্ট্র কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং সরকারি ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব না দিয়ে বিটকয়েন কেনার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন তিনি।

এছাড়াও, খনিজ সম্পদ আহরণের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও তিনি সোচ্চার ছিলেন।

২০২৪ সালে বিবিসি-র প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় লোপেজের নাম ছিল। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম ইলেকটোরাল ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউজেনিও চিকাসের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন। চিকাসকে গত ফেব্রুয়ারিতে সরকারি অর্থের অপব্যবহারের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল।

যদিও তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সিএনএন এই বিষয়ে চিকাস এবং তাঁর আইনজীবীর মন্তব্য জানতে চেয়েছিল।

২০১৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে প্রেসিডেন্ট বুকেলে অপরাধ ও গ্যাং নির্মূলের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়েছেন। ২০২২ সালে আইনপ্রণেতাদের সমর্থনে তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন, যা সরকারের সাংবিধানিক অধিকার সাময়িকভাবে স্থগিত করার অনুমতি দেয়।

এই পদক্ষেপের ফলে, রাষ্ট্রের দেওয়া আইনি সুরক্ষার অধিকারও বাতিল করা হয়। প্রথমে এই ব্যবস্থা ৩০ দিনের জন্য নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা বহুবার বাড়ানো হয়েছে এবং এখনও বহাল আছে।

কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনী প্রায় ৮৭,০০০ জনকে গ্রেফতার করেছে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশের বেশি। সরকার বলছে, এই পদক্ষেপের ফলে দেশে নিরাপত্তা বেড়েছে।

তবে সমালোচকদের অভিযোগ, এর ফলে মানুষের অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে এবং বহু মানুষকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন সংগঠন লোপেজের গ্রেফতারের নিন্দা করে বলেছে, এল সালভাদরের জরুরি অবস্থা শুধু গ্যাং-সম্পর্কিত সহিংসতা মোকাবিলায় নয়, বরং সমালোচকদের কণ্ঠরোধ করতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। সিএনএন প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সঙ্গেও এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *