ভয়ংকর কারাগারে অভিবাসীদের পাঠিয়ে ট্রাম্পের নতুন কৌশল!

এল সালভাদরের বিতর্কিত কারাগারে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসী স্থানান্তর: মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ। মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদরের একটি মেগা-কারাগারে সম্প্রতি কয়েকশ অভিবাসীকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

এই পদক্ষেপটি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনা চলছে, বিশেষ করে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এর কড়া নিন্দা জানিয়েছে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন, এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নাজিব বুকেলে সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে এই অভিবাসীদের সেখানে পাঠিয়েছে।

চুক্তি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র এল সালভাদরকে এক বছরের জন্য প্রায় ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করবে। এই মেগা-কারাগারটি ‘সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র’ (CECOT) নামে পরিচিত, যা অপরাধ দমনের লক্ষ্যে ২০২১ সালে নির্মাণ শুরু হয় এবং ২০২৩ সালে এটির কার্যক্রম শুরু হয়।

কারাগারটিতে প্রায় ৪০,০০০ বন্দী ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। কারাগারে বন্দীদের জন্য কঠোর নিয়মকানুন প্রচলিত রয়েছে। এখানে আসা বন্দীদের সঙ্গে তাদের পরিবারের সাক্ষাৎ বা বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো সুযোগ নেই।

এমনকি তাদের পুনর্বাসন বা শিক্ষার ব্যবস্থাও সীমিত। বন্দীদের বাইরের আলো-বাতাস থেকে বঞ্চিত করে সংকীর্ণ কক্ষে রাখা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, এল সালভাদরে পাঠানো অভিবাসীরা ভেনেজুয়েলার কুখ্যাত ‘ট্রেন দে আরাগিua’ গ্যাং-এর সদস্য।

যদিও তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ট্রাম্প প্রশাসন ১৮ শতকের একটি পুরোনো আইনের (Alien Enemies Act of 1798) আশ্রয় নিয়ে এই অভিবাসীদের বিতাড়িত করে এল সালভাদরে পাঠিয়েছে। এই আইনের অধীনে, প্রেসিডেন্ট যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বিদেশি নাগরিকদের আটক বা বিতাড়িত করার ক্ষমতা পান।

তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। কারাগারে বন্দীদের দুর্বিষহ জীবন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তাদের মতে, অতিরিক্ত বন্দীর কারণে কারাগারে স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

এল সালভাদরের মানবাধিকার সংস্থা ক্রিস্টোসাল-এর তথ্য অনুযায়ী, মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত দেশটির কারাগারে ১ লক্ষ ১০ হাজারের বেশি মানুষ বন্দী ছিল, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি। তাদের মধ্যে অনেকেই বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন।

ক্রিস্টোসাল আরও জানায়, বুকেলে সরকার অপরাধ দমনের নামে কারাগারে বন্দী নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, কারাগারে বন্দীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

গত বছর এল সালভাদরের কারাগারে অন্তত ২৬১ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। বন্দীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। এল সালভাদরের সরকার অবশ্য তাদের মেগা-কারাগারের সক্ষমতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গর্ব করে।

তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, সরকারের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *