এল সালভাদরে রাজনৈতিক অস্থিরতা: বুকেলে সরকারের দমননীতির শিকার হয়ে দেশ ছাড়ছেন বহু মানুষ।
মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদরে প্রেসিডেন্ট নাজিব বুকেলের সরকারের বিরুদ্ধে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণের অভিযোগ উঠেছে। দেশটির বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং সাংবাদিকদের মতে, বুকেলের নীতির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে সম্প্রতি একশোর বেশি রাজনৈতিক কর্মী ও ভিন্নমতাবলম্বীকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, হয় তাঁদের কারাগারে যেতে হবে, নয়তো চরম বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।
বুকেলের সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে ভিন্নমত পোষণকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালানোর অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা, তাঁদের গ্রেপ্তার, এমনকি তাঁদের বাড়িঘরেও তল্লাশি চালানো হয়েছে। সম্প্রতি সরকার একটি ‘বিদেশি এজেন্ট’ আইনও পাস করেছে, যা ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করার একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই আইনের মাধ্যমে বিদেশি অর্থায়নে চলা বিভিন্ন সংগঠনের কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক এবং পরিবেশবিদসহ বিভিন্ন পেশার মানুষজন এই পরিস্থিতিতে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মানবাধিকার সংগঠন ‘সোকোরো জুরিডিকো’র নেত্রী ইনগ্রিড এসকোবার। তিনি বলেন, “আমরা এমন এক সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, যেখানে ইতিহাস যেন পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।” এসকোবার তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে এল সালভador ত্যাগ করেছেন।
শুধু এসকোবারই নন, দুর্নীতিবিরোধী আইনজীবী রুথ লোপেজকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লোপেজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হলেও তিনি তা অস্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তার হওয়ার সময় লোপেজ চিৎকার করে বলেছিলেন, “আমাকে চুপ করানো যাবে না! আমি প্রকাশ্যে বিচার চাই।” মানবাধিকার সংস্থা ‘ক্রিস্টোসল’-এর প্রধান নূহ বুলক জানিয়েছেন, তাঁদের সংগঠনের সকল কর্মীকে গুয়াতেমালা ও হন্ডুরাসে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং এল সালভাদরে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “সরকার যখন যাকে খুশি, তাকেই গ্রেপ্তার করতে পারে এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাগারে বন্দী রাখতে পারে, এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।”
সাংবাদিক মনিকা রদ্রিগেজ এবং তাঁর স্বামী স্টিভ মাগানাও বুকেলের নীতির কড়া সমালোচক ছিলেন। তাঁরা একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ভিডিও ধারণ করেছিলেন, যেখানে প্রেসিডেন্টের বাড়ির কাছে একটি সড়কের উপর স্থানীয় বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করার প্রতিবাদ জানানো হচ্ছিল। রদ্রিগেজ বলেন, “ভিডিওটি বুকেলের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল। তাঁরা সাধারণ মানুষের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছিল, আর আমরা সেটার প্রমাণ দিচ্ছিলাম।” তাঁদের বাড়িঘরেও তল্লাশি চালানো হয় এবং তাঁদের ব্যবহৃত কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। পরে তাঁরা আত্মগোপন করেন এবং অবশেষে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এল সালভাদরের বর্তমান পরিস্থিতি দেশটির অতীতের গৃহযুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৭৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত চলা ওই গৃহযুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন।
বুকেলের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র খর্ব করা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাঁর কঠোর নীতি এবং ক্ষমতা প্রদর্শনের কারণে অনেকে ভীত হয়ে পড়েছেন। যদিও বুকেলের জনপ্রিয়তা এখনো আকাশচুম্বী, তার কারণ হিসেবে দেখা হয় অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের কঠোর পদক্ষেপকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বুকেলের সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কের কারণে বুকেলের সরকার আরও বেশি ক্ষমতা দেখাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: