এককালের ‘বিশ্বের খুনী রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদরে ট্যাটুর একটি বিশেষ গুরুত্ব ছিল। বিশেষ করে সেখানে কুখ্যাত গ্যাংস্টারদের মধ্যে ট্যাটু ছিল নিজেদের পরিচিতি ও ক্ষমতার প্রতীক।
তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলির কঠোর শাসনে সেই ট্যাটু এখন অপরাধের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর ফলস্বরূপ, গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে অনেককে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
সম্প্রতি এমন একটি খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে এল সালভাদরের এই পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
এল সালভাদরের গ্যাংগুলো, বিশেষ করে এমএস-১৩ এবং আঠারো স্ট্রিট গ্যাংয়ের সদস্যরা, তাদের শরীরে ট্যাটুর মাধ্যমে নিজেদের গোষ্ঠীর পরিচয় প্রকাশ করত। এই ট্যাটুগুলোর মাধ্যমে তারা নিহত গ্যাং সদস্যদের প্রতি সম্মান জানাতো এবং অন্যদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করত।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট বুকেলের সরকার গ্যাং নির্মূলের উদ্দেশ্যে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ায় পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখন, শরীরে ট্যাটু দেখা গেলে, তা গ্যাংয়ের সদস্য হওয়ার প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে এবং এর ভিত্তিতে সন্দেহভাজনদের আটক করা হচ্ছে।
এল সালভাদরের নিরাপত্তা ও বিচার মন্ত্রী গুস্তাভো ভিলাটোরো এক সাক্ষাৎকারে জানান, তারা প্রতিটি ট্যাটুর অর্থ বুঝতে শিখেছেন। তাদের একটি বিশেষ বইও রয়েছে, যেখানে শত শত ট্যাটুর ছবি ও বিশ্লেষণ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গ্যাং সদস্যরা ট্যাটুর মাধ্যমে নিজেদের দলের সদস্যদের চিহ্নিত করে থাকে। যারা গ্যাংয়ের সদস্য নয়, তাদের এই ধরনের ট্যাটু ব্যবহার করার অনুমতি নেই।
দেশটির একটি সুপ্রসিদ্ধ কারাগারে (Cecot supermax prison) কর্মকর্তাদের মতে, সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করতে ট্যাটু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আগে, গ্যাং সদস্যদের বিচারের জন্য হত্যা, অপহরণ বা চাঁদাবাজির মতো ঘটনার প্রমাণ দরকার হতো।
কিন্তু এখন, ট্যাটু থাকাই অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। কারাগারে বন্দীদের শরীরে থাকা ট্যাটুগুলো তাদের অপরাধের প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে শুধু এল সালভাদরেই নয়, এই ট্যাটুর সূত্র ধরে যুক্তরাষ্ট্রেও অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি, ভেনেজুয়েলার একজন ফুটবল খেলোয়াড়কে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশের অভিযোগে আটক করা হয়।
তার শরীরে রিয়েল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাবের একটি ক্রাউন ট্যাটু ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, এই ধরনের ট্যাটু ট্রেন দে আরুয়া গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ হতে পারে।
যদিও খেলোয়াড়টির আইনজীবী জানিয়েছেন, তার মক্কেল একজন ফুটবলপ্রেমী, তাই তিনি এই ট্যাটু করেছেন।
আরেক ঘটনায়, ভেনেজুয়েলার একজন গায়ক আর্টুরো সুয়ারেজ ট্রেহোর ভাই জানিয়েছেন, তার ভাইয়ের গলায় একটি হামিংবার্ড পাখির ট্যাটু রয়েছে, যা একটি সাধারণ শিল্পকর্ম। কিন্তু কর্তৃপক্ষের ধারণা, এই ধরনের ট্যাটুও গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ হতে পারে।
অন্যদিকে, এল সালভাদরে ট্যাটুর ধারণা এখন ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। একসময় যেখানে ট্যাটু ছিল অপরাধ জগতের প্রতীক, সেখানে এখন এটি ব্যক্তিগত রুচি ও শৈলীর প্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রাজধানী সান সালভাদরের একজন ট্যাটু শিল্পী জানান, বুকেলের সরকার গ্যাং নির্মূলের অভিযান শুরু করার পর ট্যাটুর প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টেছে। এখন অনেক মানুষ, যাদের মধ্যে ডাক্তার ও আইনজীবীও রয়েছেন, তারা ট্যাটু করাচ্ছেন।
আগে গ্যাংয়ের সদস্যরা নিজেরাই ট্যাটু শিল্পী রাখত বা জোর করে অন্যদের ট্যাটু করতে বাধ্য করত। কিন্তু এখন মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের পছন্দসই ট্যাটু করাচ্ছে এবং ট্যাটুর প্রতি তাদের আর কোনো ভয় নেই।
তথ্য সূত্র: সিএনএন