বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) বাজারে বিশ্বজুড়ে জোয়ার এসেছে, এবং এই পরিবর্তনের ঢেউ বাংলাদেশেও অনুভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইইএ)-এর নতুন এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০২৩ সাল থেকে আগামী বছরগুলোতে এই গাড়ির বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।
বিশেষ করে চীন সহ বিভিন্ন দেশে এর চাহিদা দ্রুত গতিতে বাড়ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী যত গাড়ি বিক্রি হবে, তার অর্ধেকের বেশি হবে বৈদ্যুতিক।
এই পরিবর্তনের মূল কারণ হলো, ব্যাটারির দাম কমা এবং উন্নত প্রযুক্তি। এর ফলে বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ির দামও কমছে, যা ক্রেতাদের জন্য আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
চীনের বাজারে বর্তমানে প্রচলিত গাড়ির চেয়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম তুলনামূলকভাবে কম। উদাহরণস্বরূপ, গত বছর চীনে বিক্রি হওয়া ৬০ শতাংশের বেশি বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম ছিল সাধারণ গাড়ির চেয়ে কম।
এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে, অন্যান্য দেশেও এর প্রভাব পড়বে। তবে, ইউরোপ ও আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলোতে এখনও পর্যন্ত সাধারণ গাড়ির দাম বেশি।
বৈদ্যুতিক গাড়ির এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণ হিসেবে পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার একটি কার্যকর পদক্ষেপ।
আইইএ বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে তেলের চাহিদা কমতে শুরু করবে, যার প্রধান কারণ হবে পরিবহন খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি।
তবে, বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রসারের পথে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো চার্জিং অবকাঠামোর অভাব। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে এখনো পর্যাপ্ত চার্জিং স্টেশন নেই।
আইইএ জানাচ্ছে, সরকার যদি উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়, তাহলে আগামী দশকে বিশ্বজুড়ে চার্জিং স্টেশনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।
বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে চীনের প্রভাব বর্তমানে সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রির প্রায় ৬০ শতাংশই চীনে হয়ে থাকে।
চীনের গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) চীনের ভর্তুকি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে, যা বাজারের প্রতিযোগিতায় প্রভাব ফেলতে পারে।
বৈদ্যুতিক গাড়ির এই পরিবর্তনের ঢেউ বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে। পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
একইসঙ্গে, স্থানীয় পর্যায়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের সুযোগ তৈরি হতে পারে, যা কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশে এই খাতে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়নি, তবে বিশ্ব বাজারের এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারলে, বাংলাদেশের পরিবহন খাতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইইএ)