বৈদ্যুতিক গাড়ির দৌড়ে চীন, বিশ্ব কাঁপছে!

বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) বিশ্ব বাজারে জোয়ার, বাংলাদেশের জন্য এর তাৎপর্য কী?

বিশ্বজুড়ে পরিবেশ-বান্ধব গাড়ির চাহিদা বাড়ছে, এবং আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (IEA) এর মতে, এই বছরই বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি ২০ শতাংশের বেশি বেড়ে ১ কোটি ৭০ লাখে পৌঁছাবে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী এক দশকে ইভি-র চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়বে, যা বিশ্বজুড়ে গাড়ির বাজারকে সম্পূর্ণ বদলে দেবে।

২০৩৫ সাল নাগাদ, বিশ্বজুড়ে যত গাড়ি বিক্রি হবে, তার অর্ধেকই হবে বৈদ্যুতিক—যদি চার্জিং অবকাঠামো সেই অনুযায়ী তৈরি করা যায়।

বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণ হিসেবে চীনকে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বর্তমানে চীন ইভি-র বৃহত্তম বাজার এবং উৎপাদক। গত বছর বিশ্বব্যাপী ইভি-র মোট বিক্রির ৬০ শতাংশের বেশি ছিল চীনের দখলে।

২০৩০ সাল নাগাদ, চীনের রাস্তায় চলাচলকারী প্রতি তিনটি গাড়ির মধ্যে একটি হবে বৈদ্যুতিক, যেখানে গত বছর এই সংখ্যাটা ছিল দশটিরও কম।

তবে, ইভি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলোর জন্য লাভের মার্জিন কমে যাওয়াটা একটা উদ্বেগের বিষয়। বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে, তাদের দাম কমাতে হচ্ছে।

টেসলা (Tesla) এবং চীনের লি অটো (Li Auto)-র মতো বড় কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে তাদের গাড়ির দাম কমিয়েছে। যদিও এমন পরিস্থিতিতে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, তবে দাম কমানোটা বিশ্বজুড়ে ইভি-র ব্যবহার বাড়াতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাড়ির দাম কমালে তা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করবে।

গত বছর চীনে প্রচলিত গাড়ির চেয়ে ইভি-র দাম ছিল বেশ কম। তবে ইউরোপ ও আমেরিকাতে এখনো পর্যন্ত নতুন পেট্রোল-ডিজেল গাড়ির দাম তুলনামূলকভাবে কম।

তবে আশা করা হচ্ছে, বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়লে এবং ব্যাটারি প্রযুক্তির উন্নতি হলে, ভবিষ্যতে ইভি-র দাম আরও কমবে।

বৈদ্যুতিক গাড়ির এই উত্থান শুধু গাড়ির বাজারের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এর প্রভাব পড়বে জ্বালানি খাতেও।

IEA-এর ধারণা, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে তেলের চাহিদা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে, যার প্রধান কারণ হবে পরিবহন খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি।

এই পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের জন্য কিছু সুযোগ তৈরি হতে পারে।

পরিবেশ দূষণ কমাতে এবং জ্বালানি তেলের উপর নির্ভরতা কমাতে, বাংলাদেশেও বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে।

তবে, এর জন্য প্রয়োজন চার্জিং স্টেশনসহ উপযুক্ত অবকাঠামো তৈরি করা। এছাড়া, ইভি-র দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনাটাও জরুরি।

বর্তমানে, উন্নত দেশগুলোতে ইভি-র চাহিদা বাড়লেও, চার্জিং স্টেশনের অভাব একটি বড় সমস্যা।

IEA-এর মতে, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বজুড়ে প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ চার্জিং পয়েন্ট তৈরি করা হতে পারে, যা বর্তমানে থাকা চার্জিং স্টেশনের থেকে প্রায় চারগুণ বেশি।

সবকিছু বিবেচনা করে, এটা স্পষ্ট যে বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।

বিশ্বব্যাপী এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারলে, বাংলাদেশও এর সুফল পেতে পারে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তথ্য সূত্র: CNN

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *