হাতির সমাজে শিশুদের প্রতিপালনে ‘নানী’দের ভূমিকা: এক বিশেষ আলোচনা
আফ্রিকার বন্য পরিবেশে হাতিদের মধ্যে এক বিশেষ ধরনের সম্পর্ক দেখা যায়। এখানে, মা হাতিদের পাশাপাশি, অন্য স্ত্রী হাতিরাও শাবকদের দেখাশোনা করে।
এদের ‘অললোমাথা’ বলা হয়, সহজ ভাষায় যাদের ‘নানী’ হিসেবেও চিহ্নিত করা যায়। সম্প্রতি কেনিয়ার samburu national reserve-এ এমন একটি ঘটনার সাক্ষী ছিলেন গবেষকরা।
জানা যায়, একটি ১০ বছর বয়সী হাতি তার দল থেকে হারিয়ে যাওয়ার এক মাস পর ফিরে আসে। তার সঙ্গে ছিল আরও দুটি স্ত্রী হাতি।
তাদের বয়স ১০ ও ১৫ বছর হতে পারে। এদের মধ্যে ছোটটির সঙ্গে একটি নতুন শাবক ছিল।
গবেষকদের মতে, এই ঘটনাটি ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। হাতির দলের অন্য সদস্যরা তখন বাচ্চাটিকে দেখাশোনার দায়িত্ব নেয়।
যেন তারা বাচ্চাটির ‘নানী’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। সাধারণত, এই নানী’রা বাচ্চা হাতিদের শান্ত করে, তাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেয় এবং বিপদের সময় তাদের রক্ষা করে।
এই ধরনের সহযোগিতা হাতিদের সমাজে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘নানী’রা সাধারণত কম বয়সী, প্রজননক্ষমতা সম্পন্ন নয় এমন স্ত্রী হাতি হয়ে থাকে। তারা বাচ্চাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং তাদের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসে।
এর মাধ্যমে তারা বাচ্চার দেখাশোনার অভিজ্ঞতাও অর্জন করে। এমনকি, বাচ্চা হাতিদের ভালোভাবে খাবার খাওয়ার সুযোগ করে দিতেও তাদের দেখা যায়।
নানী’রা বাচ্চার সঙ্গে খেলা করে এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। সাধারণত একটি বাচ্চা হাতি প্রায় চার বছর বয়স থেকে নিজের খাবার খাওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে।
তবে, মা হাতির সঙ্গেই তারা অনেক বছর পর্যন্ত থাকে। পুরুষ হাতিরা সাধারণত ১৪ বছর বয়সে দল ছেড়ে যায়।
শুধু তাই নয়, হাতিরা ‘অ্যালোসাকিং’-এর মাধ্যমেও একে অপরের প্রতি সহানুভূতি দেখায়। অর্থাৎ, বাচ্চা হাতিরা শুধু দুধের জন্য নয়, সান্ত্বনার জন্যও অন্য হাতির কাছে যায়।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগো চিড়িয়াখানার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সেখানে তারা দেখেছেন, ক্লান্ত শাবকেরা তাদের মায়ের থেকে দূরে গিয়ে নানী’দের সঙ্গে ঘুমায়। রাতে মায়েরা যখন খাবার সংগ্রহ করতে যায়, তখন নানী’রাই বাচ্চাদের দেখাশোনা করে।
হাতির সমাজে ‘নানী’দের এই ভূমিকা তাদের সামাজিক জীবনকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। এটি তাদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং ভালোবাসার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বন্য পরিবেশে হাতিদের এই ধরনের আচরণ তাদের টিকে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক