বই পড়া কি সত্যিই কমে যাচ্ছে? সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, অনেক ব্রিটিশ নাগরিক গত এক বছরে কোনো বই পড়েননি।
সাহিত্যচর্চার ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন উদ্বেগের মধ্যে বিশিষ্ট লেখক এবং চিন্তাবিদ এলিফ শাফাক বলছেন, উপন্যাস এখনো খুব জরুরি। তাঁর মতে, দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে উপন্যাসের আবেদন আজও ফুরিয়ে যায়নি, বরং এর প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে।
বর্তমান বিশ্বে তথ্যের প্রাচুর্য থাকলেও জ্ঞানের অভাব রয়েছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে অস্থিরতা। তথ্য আমাদের অনেক সময় বিভ্রান্ত করে, আত্ম-অহংকারী করে তোলে।
এই পরিস্থিতিতে, শাফাকের মতে, আমাদের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার। আর এই জ্ঞান অর্জনের জন্য বই অপরিহার্য। গভীর উপলব্ধির জন্য, আমাদের প্রয়োজন দীর্ঘ সময়ের পাঠ, যা উপন্যাস আমাদের দেয়।
শাফাক মনে করেন, উপন্যাস আমাদের মানবিক করে তোলে। তিনি মিলান কুন্দেরার একটি উক্তি উল্লেখ করেন, যেখানে কুন্দেরা উপন্যাসের জ্ঞানকে দর্শনের থেকে আলাদা বলেছেন।
উপন্যাসের গল্প বলার ক্ষমতা অনেক পুরোনো এবং গভীর। গল্প বলার এই শিল্প আমাদের অন্তর্দৃষ্টি, সহানুভূতি, আবেগ এবং সহমর্মিতা তৈরি করতে সাহায্য করে।
তবে অনেকেই হয়তো মনে করেন, বর্তমান যুগে মানুষের মনোযোগের সময় কমে গেছে। দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান এবং তাৎক্ষণিক চাহিদার সংস্কৃতিতে দীর্ঘ সময় ধরে বই পড়া কঠিন।
এই প্রসঙ্গে শাফাক তাঁর দুটি টেড টক-এর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি জানান, প্রথমবার যখন বক্তৃতা করেন, তখন সময় ছিল ২০ মিনিট। কিন্তু কয়েক বছর পর, তাঁর বক্তৃতার সময় কমিয়ে ১৩ মিনিটে নিয়ে আসা হয়, কারণ শ্রোতাদের মনোযোগের সময় কমে গিয়েছিল।
কিন্তু যারা বই পড়েন, তাদের মধ্যে উপন্যাসের চাহিদা এখনো অনেক বেশি। প্রকাশকরাও এটা স্বীকার করেন যে, উপন্যাসের প্রতি মানুষের আগ্রহ এখনো অটুট আছে।
শাফাক মনে করেন, এই অস্থির সময়ে উপন্যাস পাঠের গুরুত্ব আরও বাড়ে। কারণ, এটি আমাদের ভেতরের ‘আমি’কে বুঝতে সাহায্য করে।
উপন্যাসের উদাহরণ হিসেবে তিনি প্রাচীন মেসোপটেমীয় মহাকাব্য ‘গিলগামেশ’-এর কথা উল্লেখ করেন। এই কাহিনিতে এক অত্যাচারী রাজা গিলগামেশের পরিবর্তনের গল্প বলা হয়েছে, যিনি বন্ধুত্বের মাধ্যমে নতুন মানুষ হিসেবে নিজেকে আবিষ্কার করেন।
গিলগামেশের গল্পে আছে মানুষের দুর্বলতা, ব্যর্থতা, শোক এবং ভয়ের কথা। এই গল্প আমাদের শেখায়, কীভাবে মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠা যায়।
শাফাক লক্ষ করেছেন, যুক্তরাজ্যে সাহিত্য বিষয়ক অনুষ্ঠানে তরুণ প্রজন্মের উপস্থিতি বাড়ছে। তাঁদের অনেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে আসে, আবার অনেকে বন্ধু বা একাই আসে।
তাঁর মতে, সমাজের অস্থিরতা যত বাড়ে, ততই মানুষ গভীর উপলব্ধির জন্য উপন্যাসের আশ্রয় নেয়। উপন্যাসের জগৎ আমাদের ‘আমরা’ এবং ‘তারা’র বিভেদ দূর করে, মানবিকতার শিক্ষা দেয়।
এলিফ শাফাকের নতুন বই ‘দেয়ার আর রিভার্স ইন দ্য স্কাই’ (There are Rivers in the Sky) প্রকাশিত হয়েছে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান