সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে এক নতুন খেলোয়াড়: ইউরোপে ডানপন্থী রাজনীতিকদের উত্থানে মাস্কের প্রভাব।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে, সামাজিক মাধ্যমগুলো হয়ে উঠেছে তথ্যের আদান-প্রদান এবং রাজনৈতিক আলোচনার প্রধান কেন্দ্র। আর এই প্ল্যাটফর্মগুলোর ক্ষমতা এখন সরাসরি প্রভাব ফেলছে বিশ্ব রাজনীতিতে।
সম্প্রতি, ইউরোপের রাজনীতিতে এলন মাস্কের প্রভাবশালী ভূমিকা নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। মূলত, মাস্কের মালিকানাধীন ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) প্ল্যাটফর্মে ডানপন্থী রাজনীতিবিদ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উত্থানে তার ভূমিকার বিষয়টি এখন বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের বিশ্লেষণ বলছে, এলন মাস্ক ‘এক্স’-এ যাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তি চরম ডানপন্থী রাজনৈতিক আদর্শের অনুসারী। মাস্কের সঙ্গে তাদের এই সংযোগের কারণে তাদের অনুসারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, জার্মানির একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কথা বলা যায়, যিনি এমন একটি দলের সঙ্গে যুক্ত, যাদের চরমপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করেছে দেশটির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা। মাস্কের সঙ্গে তার পোস্টের মিথস্ক্রিয়ার ফলে, তার দৈনিক দর্শক সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যায়, যা পরবর্তীতে নির্বাচনে তার দলের ভালো ফল করতে সহায়ক হয়।
একইভাবে, ব্রিটেনের একজন অভিবাসন বিরোধী অ্যাক্টিভিস্ট, যিনি আদালতের অবমাননার দায়ে কারাবন্দী ছিলেন, মাস্কের ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে ফিরে আসার পর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফলোয়ার অর্জন করেছেন। সাইপ্রাসের একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারও মাস্কের সমর্থনে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আসন জেতেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এলন মাস্কের এই প্রভাব ইউরোপের রাজনীতিতে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। কারণ, এর মাধ্যমে বিদেশি শক্তি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একজন সদস্য সতর্ক করে বলেছেন, এই ধরনের প্রভাব বিস্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে ক্ষমতার ভারসাম্য বিঘ্নিত না হয়।
এই বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা যায়, এলন মাস্ক যাদের সমর্থন করছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই বিতর্কিত ব্যক্তি। তাদের মধ্যে কেউ কেউ অতীতে বর্ণবাদী মন্তব্য করেছেন, আবার কেউ অভিবাসন বিরোধী প্রচারের সঙ্গে যুক্ত।
মাস্কের এই সমর্থন তাদের অনলাইন উপস্থিতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, যা তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা প্রচার করতে সহায়ক হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাস্কের এই ধরনের পদক্ষেপের কারণে ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মটি এখন আর নিরপেক্ষ থাকছে না। বরং এটি মাস্কের ব্যক্তিগত মতামত এবং রাজনৈতিক আদর্শ প্রচারের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।
এর ফলে, প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারকারীরা একদিকে যেমন বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাচ্ছেন, তেমনিভাবে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ছে।
এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, এলন মাস্কের এই প্রভাব শুধু ইউরোপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে ডানপন্থী রাজনৈতিক দল এবং নেতারা এর থেকে সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
মাস্কের এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে তারা তাদের বার্তা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন।
তবে, এটা মনে রাখতে হবে, মাস্কের সমর্থনই কারো জনপ্রিয়তা বা সাফল্যের একমাত্র কারণ নয়। এখানে অন্যান্য অনেক কারণও কাজ করে।
তবে, মাস্কের প্রভাব নিঃসন্দেহে তাদের উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস