এলোন মাস্ক, যিনি টেসলা এবং স্পেসএক্সের মতো বৃহৎ কোম্পানির প্রধান, জানিয়েছেন যে তিনি এখন থেকে রাজনীতিতে অর্থ ব্যয় করা কমিয়ে দেবেন। সম্প্রতি কাতার অর্থনৈতিক ফোরামে ব্লুমবার্গের মিশাল হুসাইনের সাথে আলাপকালে মাস্ক এই কথা জানান।
তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে আমি রাজনৈতিক খাতে অনেক কম অর্থ ব্যয় করব।” মাস্কের এই ঘোষণার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত রাজনৈতিক খাতে অর্থ বিনিয়োগ করার কোনো প্রয়োজনীয়তা তিনি দেখছেন না।
মাস্কের মতে, তিনি ইতোমধ্যে যথেষ্ট করেছেন। তবে ভবিষ্যতে যদি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় করার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে তিনি অবশ্যই তা বিবেচনা করবেন।
এর আগে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করার জন্য মাস্ক বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করেছিলেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ট্রাম্প এবং তাঁর পছন্দের কংগ্রেস সদস্যদের জেতাতে মাস্ক প্রায় ২৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৩,৪০০ কোটি টাকা) খরচ করেছেন।
এছাড়াও, উইসকনসিন সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্বাচনেও মাস্ক-সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলো ২০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ বিনিয়োগ করে, যেখানে তাঁর পছন্দের প্রার্থী শেষ পর্যন্ত হেরে যান। শোনা যায়, ট্রাম্পের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য তিনি ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
তবে, মাস্কের এই নতুন ঘোষণার ফলে তাঁর আগের আর্থিক প্রতিশ্রুতির কোনো পরিবর্তন হবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে মাস্কের একজন রাজনৈতিক সহযোগী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা এবং সরকারি কার্যকারিতা বিভাগের প্রধান হিসেবে কয়েক মাস কাজ করার পর মাস্ক এখন পূর্ণ সময়ের সরকারি কাজ থেকে সরে আসছেন। তিনি তাঁর কোম্পানিগুলোর দিকে বেশি মনোযোগ দিতে চান।
বিশেষ করে, টেসলার ওপর তিনি এখন বেশি সময় দিতে চান। মাস্কের ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকার কারণে টেসলার কিছু সমস্যাও হয়েছে।
তবে, মাস্ক এখনো ওয়াশিংটনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তিনি জানিয়েছেন, তিনি প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন ডগ (DOGE) সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবেন এবং প্রয়োজনে ওয়াশিংটনে যাবেন।
এমনকি, এই সপ্তাহে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে রাতের খাবার খাওয়ার পাশাপাশি ক্যাবিনেট সচিবদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। সরকার এবং একই সঙ্গে সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করা কোম্পানিগুলোর প্রধান হিসেবে তাঁর দ্বৈত ভূমিকা নিয়ে ওঠা বিভিন্ন স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগকে মাস্ক সরাসরি নাকচ করেছেন।
তাঁর মতে, তাঁর কোনো আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা নেই এবং প্রেসিডেন্ট চাইলে তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন, আবার নাও করতে পারেন। মাস্ক আরও বলেন, তাঁর কোনো কোম্পানির সঙ্গে সরকারের এমন কোনো চুক্তি হয়নি, যা অনিয়মের মাধ্যমে হয়েছে বলে মনে করা হয়।
মিশেল হুসাইন মাস্ককে জিজ্ঞাসা করেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার মাস্কের স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেট স্যাটেলাইট পরিষেবা চালু করার অনুমতি দিতে চাইছে, কারণ তারা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতে চায়।
মাস্কের মতে, এর মধ্যে কোনো স্বার্থের সংঘাত নেই। তিনি আরও বলেন, তিনি শ্বেতাঙ্গ হওয়ার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় স্টারলিঙ্ক ব্যবসা করতে বাধা পাচ্ছে। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মকর্তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
হুসাইন যখন মাস্ককে প্রশ্ন করেন, কেন দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার বর্ণবাদী আইন তৈরি করেছে, তখন মাস্ক বেশ বিরক্ত হন এবং পাল্টা প্রশ্ন করতে শুরু করেন।
হুসাইন জানান, এই আইনগুলো দক্ষিণ আফ্রিকায় অর্থনৈতিক সমতা আনার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। হুসাইনের এই সাক্ষাৎকারটি ছিল মাস্কের জন্য বেশ কঠিন। কারণ, ট্রাম্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর মাস্ক সাধারণত বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে, যেমন – ফক্স নিউজ বা পডকাস্টে সাক্ষাৎকার দিতেন।
কিন্তু হুসাইনের সরাসরি ও কঠোর প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে মাস্ক বেশ কয়েকবার বিব্রত হন। তথ্য সূত্র: সিএনএন