এলোন মাস্কের স্বপ্নের ট্যাক্সি: স্ব-নিয়ন্ত্রিত গাড়ির ভবিষ্যৎ কতটা উজ্জ্বল?
বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি প্রেমীদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন টেসলার স্ব-নিয়ন্ত্রিত ট্যাক্সি (Robotaxi)। টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) এলোন মাস্ক ঘোষণা করেছেন, আগামী ২২শে জুন টেক্সাসের অস্টিনে এই পরিষেবা চালু হতে পারে।
মাস্কের মতে, এই স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্সি পরিষেবা টেসলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই প্রযুক্তি কি সত্যিই ভবিষ্যতের পরিবহন ব্যবস্থা বদলে দেবে, নাকি এটি কেবল একটি উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন?
স্ব-নিয়ন্ত্রিত গাড়ির ধারণাটি নতুন নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এরই মধ্যে এই ধরনের গাড়ির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
গুগলের ‘ওয়েইমো’ (Waymo) তাদের মধ্যে অন্যতম, যারা এরই মধ্যে যাত্রী পরিষেবা প্রদান করছে। এছাড়া, চীনের কিছু শহরেও এই পরিষেবা চালু হয়েছে। যদিও এই প্রযুক্তি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে, অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি পরিবহন ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে।
কিন্তু এই ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিরাপত্তা। স্ব-নিয়ন্ত্রিত গাড়িগুলো কীভাবে রাস্তায় চলাচল করবে, তা নিয়ে মানুষের মনে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
কারণ, এই গাড়িগুলোকে এমন সব পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেখানে মানুষের প্রতিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা হ্যাকিংয়ের মতো বিষয়গুলোও উদ্বেগের কারণ।
টেসলার এই ট্যাক্সি পরিষেবা অন্যান্য স্ব-নিয়ন্ত্রিত গাড়ির থেকে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। টেসলার গাড়িগুলো তাদের ‘ফুল সেলফ-ড্রাইভিং’ (FSD) প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করে, যা মূলত ক্যামেরার উপর নির্ভরশীল।
অন্যান্য স্ব-নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে রাডার বা ‘লিডার’ (Lidar) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা গাড়ির চারপাশের পরিবেশকে ত্রিমাত্রিকভাবে বুঝতে সাহায্য করে। মাস্ক অবশ্য ‘লিডার’-এর ধারণাকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ এবং ‘বোকা’ বলে মন্তব্য করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যামেরার উপর নির্ভরশীলতা টেসলার জন্য কিছু সুবিধা নিয়ে আসতে পারে, যেমন উৎপাদন খরচ কমানো। কিন্তু এর কিছু দুর্বলতাও রয়েছে।
ক্যামেরার মাধ্যমে রাস্তার পরিস্থিতি বুঝতে সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে প্রতিকূল আবহাওয়ায়। এছাড়াও, পথচারীদের শনাক্ত করতেও সমস্যা হতে পারে।
এই স্ব-নিয়ন্ত্রিত ট্যাক্সি পরিষেবা সফল করতে পারলে টেসলার জন্য তা বিশাল সুযোগ নিয়ে আসবে। কারণ, এই গাড়িগুলো চালক ছাড়াই দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা চলতে পারবে, যা তাদের মুনাফা বাড়াতে সাহায্য করবে।
তবে, এক্ষেত্রে টেসলাকে কিছু কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে। ‘ওয়েইমো’-এর মতো প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যেই তাদের পরিষেবা চালু করেছে এবং তারা যাত্রী পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টেসলার জন্য আসল প্রতিযোগিতাটা হবে প্রচলিত ট্যাক্সি এবং রাইড-শেয়ারিং সংস্থাগুলোর সঙ্গে। কারণ, এই সংস্থাগুলো এরই মধ্যে তাদের পরিষেবা দিয়ে বাজারে পরিচিতি লাভ করেছে।
এছাড়া, স্ব-নিয়ন্ত্রিত গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের খরচও অনেক বেশি।
বাংলাদেশে এই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ এখনো অনেক দূরের বিষয়। আমাদের দেশের রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি, ট্র্যাফিকের ধরণ এবং প্রযুক্তির ব্যবহার—সবকিছুই উন্নত দেশগুলোর থেকে ভিন্ন।
তাই, এখানে স্ব-নিয়ন্ত্রিত গাড়ির ধারণা বাস্তবায়িত করতে হলে, অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।
সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে নতুন নীতিমালা তৈরি করতে হবে। এছাড়া, প্রযুক্তিগত অবকাঠামো এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির দিকেও নজর দিতে হবে।
এলোন মাস্কের স্ব-নিয়ন্ত্রিত ট্যাক্সি পরিষেবা নিঃসন্দেহে একটি আকর্ষণীয় ধারণা। তবে, এর সফলতা নির্ভর করবে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক মডেলের উপর।
ভবিষ্যতের পরিবহন ব্যবস্থায় এর ভূমিকা কেমন হবে, তা সময়ই বলবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন