শিরোনাম: ৭২ বছর বয়সে মঞ্চে ফেরা: নাচের জগতে এক নারীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
সত্তরোর্ধ একজন নারী, যিনি জীবনের নানা বাঁক পেরিয়ে এসেছেন। নাচের প্রতি ভালোবাসাই ছিল যাঁর চালিকাশক্তি। বলছি এমিলিন ক্লেইডের কথা।
টরন্টোর ব্যালে নৃত্যশিল্পী থেকে শুরু করে নিউ ইয়র্কের আন্ডারগ্রাউন্ড জগৎ, এরপর লন্ডনের নতুন নৃত্য আন্দোলনের অগ্রদূত এবং পরবর্তীতে একাডেমিক ও মনোচিকিৎসক—এভাবে বহু পরিচয়ে নিজেকে মেলে ধরেছেন তিনি। জীবনের এই পর্যায়ে এসেও তিনি থেমে যাননি, বরং ৭২ বছর বয়সে আবারও ফিরে এসেছেন নিজের ভালোবাসার মঞ্চে।
কানাডার ন্যাশনাল ব্যালে স্কুলে যোগ দেওয়ার পর ব্যালে জগতে এমিলিনের পথচলা শুরু হলেও, খুব দ্রুতই তিনি বুঝতে পারেন, এই জগৎটা তাঁর জন্য নয়। উচ্চতা বেশি হওয়ায় সব সময়ই তাঁকে পিছনের সারিতে থাকতে হতো।
নিজের ভেতরের অপূর্ণতাকে সঙ্গী করে একসময় তিনি পাড়ি জমান নিউ ইয়র্কে। সেখানে তিনি মারথা গ্রাহামের নাচের স্কুলে ক্লাস করার সুযোগ পান।
ষাটের দশকে নিউ ইয়র্ক ছিল এক ভিন্ন জগৎ। সেখানে তিনি পরিচিত হন শিল্পের নানা ধারার সঙ্গে। সেই সময়টা ছিল যৌনতা, মাদক এবং নাচের উন্মাদনাপূর্ণ। এমিলিন জানান, সেই সময়ে শিল্পীরা অর্থের অভাবে বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করতেন।
তিনি নিজেও বিভিন্ন বন্ধুর অ্যাপার্টমেন্টে থাকতেন, যেখানে বাথরুম ছিল রান্নাঘরে।
এরপর তিনি লন্ডনে ফিরে আসেন এবং নতুন নৃত্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। সেখানে তিনি জ্যাকি ল্যান্সলে, ফার্গুস আর্লি এবং ম্যাডি ডুপ্রেসের মতো শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেন।
এই সময়ে তাঁরা প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বাইরে গিয়ে নিজেদের মতো করে কাজ করতে শুরু করেন। তাঁদের কাজগুলোতে সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হতো।
একটা সময় পর তিনি এক্সটেম্পোরারি ডান্স থিয়েটারের শিল্পী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর কাজের ধরন ছিল খুবই স্বতন্ত্র।
প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে দর্শকদের নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করতেন তিনি।
সম্প্রতি, এমিলিন তাঁর নাচের অভিজ্ঞতা এবং মনোচিকিৎসা বিদ্যার জ্ঞানকে একত্রিত করে ‘দ্য ট্রেম্বলিং ফরেস্ট’ নামে একটি নতুন পরিবেশনা তৈরি করেছেন। যেখানে নর্তকীরা মাটির পোশাকে সজ্জিত হয়ে মঞ্চে হাজির হন।
এই পরিবেশনা আসলে জীবনের গভীরতা এবং মৃত্যুর ধারণা নিয়ে তৈরি। এমিলিন মনে করেন, মানুষের শরীর ও মনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি তাঁর পরিবেশনার মাধ্যমে দর্শকদের সেই সত্য উপলব্ধি করাতে চান।
এমিলিন ক্লেইডের এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা। প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিজের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং নতুন কিছু করতে পারাটাই একজন মানুষের আসল পরিচয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান