বিখ্যাত মার্কিন র্যাপার এমিনেমের (Eminem) কিছু মুক্তি না পাওয়া গান অনলাইনে বিক্রি করার অভিযোগে তার এক প্রাক্তন স্টুডিও প্রকৌশলীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল প্রসিকিউটররা এই খবর জানান।
অনুসন্ধানকারীরা জানিয়েছেন, এমিনেম বা তার গানের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্কোপ ক্যাপিটাল লেবেল গ্রুপের (Interscope Capital Labels Group) অনুমতি ছাড়াই ২৫টির বেশি গান অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে অথবা বিতরণ করা হয়েছে। এফবিআইয়ের (FBI) তথ্যানুযায়ী, গানগুলো এমিনেমের ডেট্রয়েটের শহরতলির একটি স্টুডিওর সুরক্ষিত ভল্টে রাখা হার্ড ড্রাইভে সংরক্ষিত ছিল।
অভিযুক্ত ৪৬ বছর বয়সী জোসেফ স্ট্রেঞ্জ মিশিগানের হলি এলাকার বাসিন্দা। ডেট্রয়েটের ভারপ্রাপ্ত ইউএস অ্যাটর্নি জুলি বেক জানিয়েছেন, কপিরাইট লঙ্ঘন এবং চুরি করা মালামাল আন্তঃরাজ্য পরিবহনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। স্ট্রেঞ্জ, যিনি ২০২১ সালে এমিনেমের স্টুডিও থেকে চাকরি হারান, উভয় অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
স্ট্রেঞ্জের আইনজীবী ওয়েড ফিঙ্ক এক বিবৃতিতে জানান, তার মক্কেল বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। তিনি বহু বছর ধরে সঙ্গীত জগতে কাজ করেছেন। তিনি এই অভিযোগকে ‘প্রমাণিত না হওয়া অভিযোগ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা এখনো কোনো গ্র্যান্ড জুরি বা বিচারকের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি।
তিনি আরও জানান, “আমরা বিষয়টি আদালতে মোকাবিলা করব এবং আমাদের জেলার বিচারকদের প্রতি আমাদের গভীর আস্থা রয়েছে।”
জানা গেছে, স্টুডিওর কর্মীরা জানুয়ারিতে এফবিআইকে এই চুরির বিষয়ে জানান। তাদের ভাষ্যমতে, এখনো মুক্তি না পাওয়া কিছু গান বিভিন্ন ওয়েবসাইটে, যেমন- রেডডিট (Reddit) এবং ইউটিউবে (YouTube) পাওয়া যাচ্ছে।
তদন্তে জানা যায়, ২০১৯ সালের অক্টোবর এবং ২০২০ সালের জানুয়ারির মধ্যে, যখন স্ট্রেঞ্জ সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তখন তিনি একটি সুরক্ষিত হার্ড ড্রাইভ থেকে তথ্য অন্য একটি হার্ড ড্রাইভে স্থানান্তর করেন।
এমিনেমের সহযোগী ফ্রেড নাসের (Fred Nassar) অনলাইনে ভক্তদের গানগুলো বিতরণ না করার জন্য সতর্ক করার পরেই তদন্তকারীরা ক্রেতাদের শনাক্ত করতে সক্ষম হন।
কানাডার বাসিন্দা, ডজা র্যাট (Doja Rat) নামে পরিচিত একজন তদন্তকারীদের জানান, তিনি স্ট্রেঞ্জের কাছ থেকে প্রায় ৫০,০০০ মার্কিন ডলারে (১ ডলার = ১১০ টাকা ধরে হিসাব করলে প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা) ২৫টি গান কিনেছিলেন। তিনি এমিনেমের ভক্তদের কাছ থেকে বিটকয়েনের মাধ্যমে এই অর্থ সংগ্রহ করেন।
তিনি আরও জানান, স্ট্রেঞ্জ এমিনেমের হাতে লেখা গানের কিছু খাতা (lyrics) বিক্রি করারও চেষ্টা করেছিলেন।
আরেক দল ভক্ত, যাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কানেকটিকাটের এ টি এল (ATL) নামের একজন, স্ট্রেঞ্জ থেকে প্রায় ১,০০০ মার্কিন ডলারে (প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা) ‘কয়েকটি’ গান কিনেছিলেন।
জানুয়ারিতে স্ট্রেঞ্জের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে এফবিআই এমিনেমের হাতে লেখা গানের অসংখ্য খাতা ও নোট, একটি মুক্তি না পাওয়া ভিডিওর ভিএইচএস টেপ এবং ১২,০০০টি অডিও ফাইলের হার্ড ড্রাইভ খুঁজে পায়। এফবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, কিছু ফাইলে এমিনেম এবং তার সঙ্গে কাজ করা শিল্পীদের গানের বিভিন্ন পর্যায়ের কাজ ছিল।
উল্লেখ্য, এমিনেম ২০২৩ সালের এমটিভি ইএমএ-তে সেরা হিপ-হপ শিল্পী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ২০২২ সালে তাকে রক অ্যান্ড রোল হল অফ ফেইমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, স্ট্রেঞ্জ তার চাকরি ছাড়ার সময় একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, যেখানে স্পষ্টভাবে এমিনেমের কাজ ইলেকট্রনিকভাবে বিতরণ করতে তাকে নিষেধ করা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত ইউএস অ্যাটর্নি জুলি বেক বলেন, “সৃষ্টিকর্মীদের অধিকার রক্ষা এবং তাদের আসল কাজ অন্য কারো দ্বারা পুনরুৎপাদন ও বিতরণের হাত থেকে বাঁচাতে মেধাসম্পদের সুরক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন কিছু ব্যক্তি তাদের সৃষ্টিশীলতার সুযোগ নিয়ে লাভ করতে চায়।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন